দুখীদের কথা বলছি
জাফর পাঠান
আমি আজ সেই দুখীদের কথা বলছি-
আকাশকে বানিয়েছে যারা চালা, বায়ুকে করেছে প্রাচীর
মাটিকে বানিয়েছে বিছানা, গায়ের চামড়া তাদের পোশাক
মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকা যাদের দাবি,
সমাজে কেন নয় গ্রহণীয়, কেন কেতাবি?
আমি সেই অনাহারীদের কথা বলছি-
যাদের ছুটতে হয় ডাস্টবিনে নিত্য-জঠরজ্বালা যে আহারে
যেতে হয় হাটে, ঘাটে, মাঠে অথবা কোন বাড়ির দুয়ারে,
মৃত পশু পাখির সন্ধানে খাল বিলের ধারে,
না পেলে থাকে নীরবে কুঁকড়িয়ে অনাহারে।
আমি সেই দুর্ভাগাদের কথা বলছি-
যাদের অবুঝ শিশুরা কখনও স্বাদ নেয়নি গরুর দুধের
পুষ্টিহীন ক্লিষ্ট মায়ের শুকনো বুকে দুধের জন্য থাকে মিশে,
না পেয়ে নিস্পলকে রয় অবশেষে,
ক্ষুধার যন্ত্রণা হাসে সৃষ্টির পরিহাসে।
আমি সেই অভাবীদের কথা বলছি-
কপর্দকহীন মানুষ হিসাবে জনম নিয়েছে যারা এই ধরায়
অর্থ বৈষম্যের তারতম্যে যারা হয় অজানা-অচেনা জীব,
নেই অধিকার, বাচিতে হবে-হয়ে নির্জীব,
পঁচে-মরে গেলেও আমলাতন্ত্রে ওরা সজীব।
আজ সেই অবহেলিতদের কথা বলছি-
রাষ্ট্রের প্রতিটি গঠনে যারা নিয়ত জীবনকে রাখে বাজি
স্বাধীনতায় ঢেলে দিয়েছিলো রক্ত, নিজের স্বার্থ কাটি,
এরাই প্রকৃত নির্ভয়ী চেতনা ধারী ও খাটি,
এদের ভালোবাসায় সিক্ত এদেশের মাটি।
আমি সেই বঞ্চিতদের কথা বলছি-
মানবতা আর অধিকারের আশা নিয়ে বেঁচে আছে যারা
নিজ মাতৃভূমে মাথা গোঁজার ঠাই যাদের প্রাণের বয়ান,
এরা এই ভূমিরই সন্তান, ত্যাগে মহিয়ান,
বংশ পরম্পরায়, ক্রান্তিকালের আগুয়ান।
হৃদয় বক্ষ ভেদিয়া গৃহহীনদের কথা বলছি-
কোন অপরাধে এদেরকে মৃত্যু অবধি থাকতে হবে গৃহহারা
আর কোন সময় অবধি এদেরকে থাকতে হবে হয়ে সর্বহারা,
এদেরকে কে দিবে-অন্য, বস্র, বাসস্থান,
কে গড়বে এদের বঙ্গমায়ের সু-সন্তান।
চিৎকারে আজ জাতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে বলছি-
অসহায় আর দলিতদের জন্য সংবিধানের ভাষা কেন স্তব্ধ?
কেন এদের কথায় নির্বাহী হারায় চলৎশক্তি, হারায় উপলব্ধ?
কেন বিচার বিভাগের শৌর্য হাতুড়ীর শব্দ-নিস্তব্ধ?
কেন উথলিয়ে উঠছেনা সংসদ? কেন বাকরুদ্ধ?
আর কতকাল জাতির এই কান্ডারিরা স্ব-ভূমে থাকবে অবরুদ্ধ?