জন্ম ও পরিবারঃ-
-------------------------
পিতা সাইদুল মিঞা, মাতা আনোয়ারা বিবি। ১৯৯৩ সালের ১৮ জুলাই (বাংলা-১৪০০ সালের ২ শ্রাবণ রবিবার) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় মুর্শিদাবাদ পৌরসভার অন্তর্গত (৮ নম্বর ওয়ার্ড) বাউলিবাগ গ্রামে একটি নিম্নবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। জন্মসুত্রে ভারতীয়। কবির আসল নাম হল আনান মিঞা। তিনি প্রকৃতিকে অনেক বেশি ভালবাসেন বলে বন্ধু, প্রতিবেশি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁকে অরণ্য নামে ডাকতেন। তারপর থেকে তিনি ওই ছদ্দনামে লিখছেন। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও অবদানে মুগ্ধ হয়ে তার মাঝে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
মনোভাবনাঃ-
------------------
কবি অরণ্য প্রতিবাদী, বিদ্রহী ও প্রাকৃতিক লেখক। তিনি ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী, এজন্য তাঁকে ভাবুক কবি বলা হয়। দেশ ও সমাজের বুকে ঘটে যাওয়া বাস্তবিক চিত্র, সবুজ ধরণীর সুন্দর দৃশ্য, প্রকৃতির অবদান, ভালবাসসা, বিরহ, প্রতিবাদের মত বিষয়কে তিনি মনের মধ্যে ধারণ করেন, তারপর সেখান থেকেই সৃষ্টি করেন মহা-কাব্যের। কবির মন সর্বদা ভাবনার মধ্যে কাটে। কখনো সমাজের প্রতি ভালবাসা, কখনো হৃদয়ের বেদনায় আঁকা নীল রঙা ছবি, কখনো অশ্রু সিক্ত রমণীর প্রতীক্ষার প্রহর, আবার কখনো বিরহের জালে বন্দি হয়ে থাকেন চিন্তামগ্ন মন নিয়ে! তিনি স্বাধীনতা দেখেননি, অনুভব করেন স্বাধীনতার ৬৮বছর পরেও দেশের কোন উন্নতি হয়নি, তাঁর মনে হয় দেশ এখনো দুর্নীতিবাজদের হাতে পরাধীন হয়ে আছে। তিনি লক্ষ্য করেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াই অসংখ্য দরিদ্র, অসহায়, অবহেলিত মানুষ। এই সব করুণ দৃশ্য দেখে তাঁর হৃদয় কেঁপে ওঠে! তখন তিনি সাম্যের খোঁজে পথে বেরিয়ে পড়েন। যখন বুঝতে পারলেন দেশের রাজনীতি ও সমাজ ব্যবস্থা ধীরে-ধীরে অসুস্থতার বেড়াজালে বন্দি হচ্ছে, দিনে দিনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাড়ছে, সমাজের বুকে অনৈতিক কার্যকলাপ ঘটছে, তখন এ সবের বিরুদ্ধে কলম ধরেন ও কবিতার মাঝে বিদ্রোহের ডাক দেন।
ছাত্র জীবনঃ-
------------------
১৯৯৮—২০০০ সাল পর্যন্ত অরণ্য একটি বে'সরকারি ইংলিশ মিডিয়াম বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। ২০০৫ সালে রতনপুর হীরামতিদে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তার পর ১ বছর বাড়িতে গৃহ শিক্ষকের কাছে শিক্ষা অর্জন করেন। ২০১১ সালে বরফখানা তিনকড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ছাত্র জীবনে বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর জ্ঞানের সমৃদ্ধি ঘটে। অর্থাভাব ও দরিদ্রতার কারণে ছাত্র জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে না পারলেও বাংলা সাহিত্যের প্রতি তিনি যে জ্ঞান লাভ করেন সেটা তাঁর কবিতা পাঠ করলেই বোঝা যায়। তিনি দুঃখ কষ্টকে খুব কাছে থেকে অনুভব করেন! দরিদ্রতার কারণে শিক্ষা জগত থেকে দূরে থাকলেও বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেন।
সাহিত্যকর্মঃ-
-------------------
তেইশ বছর বয়স থেকে লেখা শুরু করেন, তাঁর লেখা প্রথম কবিতা নদী বাঁচাও। বৃত্তিমূলক ভাবে তিনি একজন কবি, তাঁর কবিতার মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাবনার ছোঁয়া পাওয়া যায়। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পাই প্রকৃতি, প্রেম, বিরহ, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত সমাজের তিনি স্বপ্ন দ্যাখেন। শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তাঁর জীবনের মূল উদ্বেশ্য। অর্থাভাবের কারণে তিনি কখনো ভেঙে পড়েন না, মানুষের কল্যাণের জন্য নিরন্তর নিবেদিত থাকেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দেন। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। দরিদ্র মানুষের প্রতি গভীর মনোভাবনার প্রকাশ ঘটে তাঁর কবিতায়। অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ, অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে, পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত কর্মকর্তা, ধনী মহাজন ও অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ তাঁর কবিতার অন্যতম বিষয়। তিনি কবিতার মধ্য দিয়ে দূর করতে চান সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য, শোষণ-বঞ্চনা, অণাচার, জাতি ভেদাভেদ, নেশা গ্রস্ত সমাজ, মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার! মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।সুকান্ত ভট্টাচার্যের চিন্তাধারা ও মনোভাবনার সঙ্গে তাঁর মনোভাবনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর জীবন সংগ্রামের প্রতি মুগ্ধ হয়ে তিনি (সুকান্তের প্রতি) কবিতা লিখে তাঁকে উৎসর্গ করেন। যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণার সঙ্গে মোকাবিলা করার সাহস এবং কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা তিনি সুকান্তের কবিতা থেকে পা'ন। কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য দ্বারা প্রভাবিত।