সেদিন ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিল রাজনৈতিক মহল,
তখনো বুঝিনি ওদের অকরুণ খেলা।

নামাজের উদ্দেশ্যে গমন করেছিলাম কাটরা মসজিদে
ভাবিনি এমন নিসংশ হত্যার মুখে পড়ব,
হটাৎ দেখি, এ কি? আচমকা রক্তের খেলায় উঠল মেতে"
ঐ রক্ত পিপাশু দানবের দল গুলি, তির, বল্লম, হাসুয়ার
আঘাতে আমাদের দেহকে করেছিল ক্ষত-বিক্ষত!
সেদিন শহরের রাজপথে ঢেলেছিলাম তাজা লহু!
হিংস্রো বাঘের মত আমাদের লাশগুলো
টেনে হিচড়ে করেছিল বীভৎস;
ওরা পশু, নেড়ে কুকুর, পিশাচের দল।

আমাদের অপরাধ কি ছিল সেদিন?
আমরা মুসলমান তাই?
কেন সেদিন বাধা দেওয়া হয়েছিল
কেন গণহত্যা করা হয়েছিল আমাদের!
সেদিন পুলিশ ছিল নীরব
আমাদের চিৎকারে কেউ ছুটে আসেনি,
স্টেসনের প্লাটফর্মের রক্ত চেটে চেটে খেয়েছে
অগণিত শেয়াল, হায়না, আর নেড়ে কুকুর"
রাতের অন্ধকারের আশ্রয় নিয়ে অতি গোপনে
আমাদের লাশ পুঁতেছিল কাটি গঙ্গার তীরে।

আজ ৩১ বছর পর -
চাষীদের কোদালের আঘাতে নবরূপে জেগেছি আমি।
আমার মৃতদেহের কঙ্কালে নেই মাংসের কোন নিদর্শন
আছে শুধু মাথার খুলি আর বুকের হাড়,
ধীরে-ধীরে জমে গেল বহু মানুষ
ছুটে এল আমার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা!
কঙ্কালের দিকে সে চেয়ে রইলো নিথর দৃষ্টিতে।

আমি ভাবলাম -
হয়ত ওদের মত কোন দানব হাতে হাসুয়া নিয়ে বলবে,
ছুড়ে ফেলে দে ঐ কঙ্কাল নদীর জলে!
কিন্তু এ কি?
কোন এক চাষী ভাই করুণার স্বরে বলে উঠল
আহা-রে! মানুষটা কে না-জানি কত কষ্ট দিয়ে
মেরে এখানে পুঁতে রেখেছে; ইস!

আজ কারো মনে নেই সেদিনের ইতিহাস
ভুলে গেছে সবকিছু সমাজ ও দেশ।
৩১ বছর পরেও আমি ভুলিনি ঐ দুর্বিষহ পরিণতির কথা
ভুলিনি সেদিনের লহুমাখা আমাদের মৃত্যুকে!
আজও মেলেনি আদালতের দ্বারে সুবিচার,
আছি প্রতীক্ষায় রত আমার অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে"
সেই দিনের; যেদিন প্রকাশ্যে আসবে ১৯৮৮ সালের হত্যাকাণ্ড।


রচনাকালঃ- ১০/০৩/২০১৯