বাপ জান আমার নিত্য দিন সেই আযান দেয়া ভোরে,
হাত দুটি তুলে সাহায্য চায় বসে রাস্তার মোড়ে।
মায়ের কথা বলি, মা যে আমার কাজের বোয়া,
আমাদের জীবনটাই চলে পেয়ে অন্যের দয়া।
আর আমি, কখনও মায়ের সাথে,
আবার কখনও বাপের সাথে ঘুরি পথে পথে।
বাপ জান অবশ্য নিষেধ করে, এমন শিয়ানা মাইয়া,
পথে পথে ঘুরলে কেমনে দিবে বিয়া।
আমারে নিয়ে কেউ যদি কোন কথা বলতে চায়,
শত কথা শুনিয়ে তারে চলে আসি নিয়ে বিদায়।
আহারে বাপ জান, কিছু দান করে যান
প্রতিদিন তোমার এমন আকুল মিনতি,
সইতে পারিনা কলিজায় এসে আঘাত করে দিবা রাতি।
আমারে দেখে ঈর্ষায় জ্বলে পাড়ার লোক জনে,
বলে, পেটে ভাত নায় এত ফিট ফাটে চলা আসে কেমনে।
মায়ের অসুখে কাজ করতে গেলাম মালিকের বাড়ি,
এ কাজ সে কাজ সব করতে হবে মাজতে হাঁড়ি,
আমি বলেছিলাম পারবোনা করতে এত কাজ
সে কারণে মেরেছিল আমারে চুলে গোছা ধরি।
বই হাতে করে কোথাও গেলে সবাই ব্যঙ্গ করে,
গরিব মানুষ কি মানুষ নারে ভাই কেন বা এমন করে।
সামনে পরীক্ষা তাই প্রভুর কাছে মোনাজাতে দুহাত তুলে,
বলেছিলাম, লক্ষ্যে পৌঁছে দিও গো আমারে
দয়াল আর ভাসাইয়ো না চোখের জ্বলে,
খেয়ে না খেয়ে টাকা গুছিয়ে দিয়েছিলাম পরীক্ষা ফি
আমি গিয়েছিলাম পরীক্ষা হল-এ।
বাড়িতে এসে সবাই বলেছিল, চলতে পারো না
মেয়েকে লেখাপড়া শিখাও কেন তবে,
বাপ জান বলেছিল আমার রোজি দেখো
একদিন মানুষের মত মানুষ হবে।
আমরা দু’দিন যাবত না খেয়ে থাকা মত
আমি ক্লান্ত শরীরে পড়ে আছি বিছানায়,
মা গেছে পরের বাড়িতে কাজ করতে
বাবা ঐ রাস্তার মোড়ে বসে মানুষের কাছে ভিক্ষা চায়।
হঠাৎ খবর এলো আমি নাকি পাশ রেজাল্ট ভালো
হয়েছি বি,সি,এস ক্যাডার,
আমি চিৎকার করে কেঁদে বললাম বাপ জান তুমি কই
দেখো রোজি এবার,
হয়েছে এই গ্রামের সেরা হয়েছি বি,সি,এস ক্যাডার।