শুভকরওয়া চৌথ উৎসব (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

করবা চৌথের এই মহান উৎসবটি বিশেষ করে উত্তর ভারতে পালিত হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা এবং অটুট আস্থার উৎসব পালিত হবে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর। এই দিনে মহিলারা সকাল থেকেই শৃঙ্গার করে নির্জলা উপবাস করেন এবং সন্ধ্যায় কাঠ ও মাটির পাত্রের বিশেষ পুজো করে এবং রাতে চাঁদ দেখে উপবাস ভাঙেন। করবা চৌথের উপাসনা ও উপবাসের কিছু নিয়ম আছে যা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

নির্জলা উপবাস: করবা চৌথের উপবাস কঠিন বলে মনে করা হয়। এতে সূর্যোদয় থেকে রাতে চাঁদ ওঠা পর্যন্ত কিছুই খাওয়া বা পান করা হয় না। এই ব্রত সূর্যোদয়ের সঙ্গে শুরু হয় এবং রাতে চন্দ্রোদয়ের পরই শেষ হয়। এই সময়ে বিবাহিত মহিলাদের নির্জলা উপবাস পালন করা উচিত। চাঁদ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত এবং পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত করবা চৌথের জল খাওয়া উচিত নয়। তবে কারও যদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকে তবে তারা জল খেতে পারেন। স্ত্রীর স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে স্বামীরা ব্রত রাখলেও হবে।

করবা চৌথের দিনে, করবা মা এবং চতুর্থী তিথির দেবতা গণেশের পুজো করার প্রথা রয়েছে। এছাড়া চাঁদ দেখার সময় তার পুজো করা হয়। একই সময়ে, করবা চৌথের চন্দ্রোদয়ের আগে, ভগবান শিব, মা পার্বতী, ভগবান গণেশ এবং ভগবান কার্তিকেয়ের পুজো করুন।

করবা চৌথের ব্রত কথা: করবা চৌথের ব্রত কথা ছাড়া এই ব্রত অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, করবা চৌথের দিন এই কথা শুনলে বা পড়লে বিবাহিত মহিলারা সর্বদা সুখী থাকেন। চৌথের কথা শুনলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম বাড়ে এবং দাম্পত্য জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।

করবা চৌথের পুজো করার সময় দিকটির দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। পুজো করার সময় দেব-দেবীর মূর্তি পশ্চিম দিকে মুখ করা উচিত এবং বিবাহিত মহিলাদের পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করা উচিত। উত্তর-পূর্ব (ইশান) হল করবা চৌথের উপাসনার আদর্শ স্থান কারণ এই কোণটি পূর্ব ও উত্তর দিকের শুভ প্রভাবে আশীর্বাদপ্রাপ্ত।

একটি মাটির পাত্র দিয়ে চন্দ্রদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করুন: করবা চৌথের দিন চন্দ্রদেবকে মাটির পাত্র দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। মাটির পাত্রকে গণেশ ও পৃথিবীর প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পুজোর প্লেট: করবা চৌথের দিন বিবাহিত মহিলাদের পুজোর থালায় মেহেন্দি, সিঁদুর, চুড়ি, টিপ, পায়ের আংটি, চাল, প্রদীপ, ফল, ফুল, বাতাসা, বিয়ের চুনরি এবং জল ভর্তি কলস থাকতে হবে।

শুভ করবাচৌথ উৎসব  (প্রথম পর্ব)
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

করবাচৌথ দিবসে মহা ধূমধাম,
হাসিখুশি কলরব নাহিক বিরাম।
সারাদিন উপবাস করে নারীগণ,
পতির কল্যাণ হয় তাহার কারণ।

লুচি, সুজি, সুমিষ্টান্ন, সুস্বাদু ব্যঞ্জন,
উত্তম ভোজন কত করে আয়োজন।
মেহেন্দি লাগায় করে উত্তম শৃঙ্গার,
দামী দামী অলঙ্কার, গলে রত্নহার।

চতুর্থীর চাঁদ উঠে সুনীল গগনে,
চালুনি লইয়া দেখে পূণ্য শুভক্ষণে।
সামাজিক রীতি এই হিন্দুশাস্ত্র কয়,
সতীর পূণ্যের ফলে পতি সুখী হয়।

অগ্রে পতি পরে পত্নী করয়ে আহার,
একটি দিনের তরে প্রতীক্ষা আবার।
প্রতি বর্ষে একদিন আসে শুভক্ষণ,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।