হিন্দু পঞ্জিকা মতে প্রতি বছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে ধনতেরাস পালিত হয়। কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীতে ধন্বন্তরি অবতরিত হয়েছিলেন, তাই এ দিন ধন্বন্তরি দেবের পুজো করার রীতি প্রচলিত আছে। চলতি বছর ২ নভেম্বর ধনতেরাস। এ দিন সকলেই বিষ্ণুর অবতার ধন্বন্তরির পুজো করেন।
শাস্ত্র মতে, এ দিনই সমুদ্র মন্থনের ফলে অবতরিত হন ধন্বন্তরি। ধন্বন্তরির পাশাপাশি এ দিন কুবের, লক্ষ্মী, গণেশ ও যমের পুজো করা হয়। ধন্বন্তরিকে প্রসন্ন করে পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি লাভের জন্য তাঁর পুজো করা উচিত।
ধনতেরাস পুজোর নিয়ম
১. বাড়ির ঈশান কোণে ধন্বন্তরির পুজো করুন।
২. পুজোর সময় ঈশান কোণ, পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ রাখবেন।
৩. পুজোয় পঞ্চদেব অর্থাৎ সূর্য, গণেশ, দুর্গা, শিব ও বিষ্ণুর প্রতিমা স্থাপন করুন
৪. এদিন ধন্বন্তরীর ষোড়শোচার পুজো করুন।
৫. ধন্বন্তরির ছবি বা মূর্তি স্থাপনের পর জল দিয়ে তিনবার আচমন করে তাঁকে আহ্বান জানান।
৬. ছবিতে রোলী, অক্ষত, ফুল, জল, বস্ত্র অর্পণ করুন। ধূপকাঠি দেখান ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। এবার ধন্বন্তরি মন্ত্র জপ করুন।
৭. এর পর নৈবেদ্য দিন। ধন্বন্তরীকে হলুদ মিষ্টি অর্পণ করবেন।
৮. পুজোর পর সাঙ্গতা সিদ্ধির জন্য অবশ্যই দক্ষিণা অর্পণ করবেন।
৯. এদিন কুবের ও লক্ষ্মীর পুজোও করা হয়। কুবেরকে সাদা মিষ্টি অর্পণ করবেন। এ দিন ওম হৃীং কুবেরায় নমঃ মন্ত্র জপ করবেন।
১০. প্রদোষ কালে ঘরের প্রবেশদ্বার বা আঙিনায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। যমের নামেও একটি প্রদীপ জ্বালান।
১১. ধনতেরাসে নিজের ইষ্ট দেবতার পুজো করার সময় স্বস্তিক, কলস, নবগ্রহ, পঞ্চ লোকপাল, ষোড়শ মাতৃকা ও সপ্ত মাতৃকার পুজো অবশ্যই করবেন।
ধন্বন্তরির মন্ত্র
ওম শ্রী ধন্বন্তরৈ নমঃ।
ওম নমো ভগবতে মহাসুদর্শনায় বাসুদেবায় ধন্বন্তকায়েঃ,
অমৃতকলশ হস্তায় সর্বভয় বিনাশায় সর্বরোগনিবারণায়,
ত্রিলোকপথায় ত্রিলোকনাথায় শ্রী মহাবিষ্ণুস্বরূপ,
শ্রী ধন্বন্তরি স্বরূপ শ্রী শ্রী শ্রী অষ্টচক্র নারায়ণায় নমঃ
ওম শঙ্খ চক্র জলৌকাং দধদমৃতঘণ্ট চারুদোর্ভিশ্চতুর্মিঃ,
সূক্ষ্মস্বচ্ছাতিহৃদ্ধ্যাংশুক পরিবিলসন্মৌলিমংভোজনেত্রম,
কালাম্ভোদোজ্জ্বলাঙ্গং কটিতটবিলসচ্চারুপীতাম্বরাঢ্যম,
বন্দে ধন্বন্তরিং তং নিখিলগদবনপ্রৌঢদাবাগ্নিলীলম।
ধনতেরাসের মাহাত্ম্য
কথিত আছে, সমুদ্র মন্থনের ফলে যখন ধন্বন্তরি প্রকট হয়েছিলেন তখন তাঁর হাতে অমৃত কলস ছিল। তাই এ দিন ধন্বন্তরীর পুজো করাকে শুভ মনে করা হয়। এ দিন ধন্বন্তরী দেব ও লক্ষ্মীর পুজো করলে জীবনে কখনও অর্থাভাব থাকে না। পাশাপাশি এদিন কুবেরের পুজো করাও শুভ।
শুভ ধনতেরাস (ধন ত্রয়োদশী) কবিতা
কলমে-কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ধন ত্রয়োদশী আজি পূণ্য শুভক্ষণে,
করিবে মালক্ষ্মী পূজা ভক্তি শুদ্ধমনে।
সর্বাগ্রে গণেশ পূজা কর বিধিমতে,
নির্বিঘ্নং কুরু মে দেব কহ নমস্তুতে।
তত্পরে কুবেরের করহ পূজন,
তাহার কৃপায় পাবে বহু রত্নধন।
ধন্বন্তরি পূজা কর হয়ে শুদ্ধমতি,
ধূপদীপ জ্বালি কর সবার আরতি।
স্বর্ণ অলঙ্কার আদি বিবিধ প্রকার,
ইচ্ছা হয় কিনিবার আজি সবাকার।
সোনারূপা অলঙ্কার কেহ করে ক্রয়,
দিনে দিনে ধন রত্ন তার বৃদ্ধি হয়।
ধন ত্রয়োদশী আজি পূণ্য শুভদিন,
কাহারও নিকটে না লবে অর্থঋণ।
ধন ত্রয়োদশী কাব্য হল সমাপন,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।