কার্তিক দেবের পরিচয়, পূজার ধ্যান ও প্রণামমন্ত্রঃ-
কার্তিক একজন পৌরাণিক দেবতা। তিনি ভগবান শিব ও মা দুর্গার পুত্র। দেবতা কার্তিক অত্যন্ত সুন্দর, সুঠাম দেহ এবং অসীম শক্তির অধিকারী। পুরাণে আছে, তারকাসুরের আধিপত্য থেকে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করার জন্য স্বর্গের দেবতারা তাঁকে সেনাপতিরূপে বরণ করেন। তাঁর দেহবর্ণ তপ্ত স্বর্ণের মতো। যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে কার্তিকের হাতে তীর, ধনুক ও বল্লম দেখা যায়। তার বাহন সুদৃশ্য পাখি ময়ূর। কার্তিক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এ সকল যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। পুরাণ অনুসারে তারকাসুরকে বধ করার জন্য কার্তিকের জন্ম হয়েছিল। তিনি বলির পুত্র বাণাসুরকেও পরাজিত করেছিলেন। কার্তিকের অন্য নাম স্কন্দ, মহাসেন, কুমার গুহ ইত্যাদি। স্কন্দপুরাণ কার্তিককে নিয়ে রচনা করা হয়েছে।
কার্তিক পূজাঃ-------
কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্তিক পূজার আয়োজন করা হয়। কার্তিক পূজার মাধ্যমে দম্পতিরা সন্তান-সন্তুতি প্রার্থনা করে থাকেন।
কার্তিক দেবতার ধ্যান :-----
ওঁ কার্ত্তিকেয়ং মহাভাগং ময়ুরোপরিসংস্থিতম্।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভং শক্তিহস্তং বরপ্রদম্।।
দ্বিভুজং শক্রহন্তারং নানালঙ্কারভূষিতম্।
প্রসন্নবদনং দেবং কুমারং পুত্রদায়কম্।।
অনুবাদঃ-- কার্তিকদেব মহাভাগ, ময়ূরের উপর তিনি উপবিষ্ট। তপ্ত স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল তাঁর বর্ণ। তাঁর দুটি হাতে শক্তি নামক অস্ত্র। তিনি নানা অংলকারে ভূষিত। তিনি শত্রু হত্যাকারী। প্রসন্ন হাস্যোজ্জ্বল তাঁর মুখ।
.
প্রণাম মন্ত্রঃ------
ওঁ কার্ত্তিকের মহাভাগ দৈত্যদর্পনিসূদন।
প্রণোতোহং মহাবাহো নমস্তে শিখিবাহন।
রুদ্রপুত্র নমস্ত্তভ্যং শক্তিহস্ত বরপ্রদ।
ষান্মাতুর মহাভাগ তারকান্তকর প্রভো।
মহাতপস্বী ভগবান্ পিতুর্মাতুঃ প্রিয় সদা।
দেবানাং যজ্ঞরক্ষার্থং জাতস্ত্বং গিরিশিখরে।
শৈলাত্মজায়াং ভবতে তুভ্যং নিত্যং নমো নমঃ।
অনুবাদঃ-- হে মহাভাগ, দৈত্যদলনকারী কার্তিক দেব তোমায় প্রণাম করি। হে মহাবাহু, ময়ূর বাহন, তোমাকে নমস্কার। হে রুদ্রের (শিব) পুত্র, শক্তি নামক অস্ত্র তোমার হাতে। তুমি বর প্রদান কর। ছয়। কৃত্তিকা তোমার ধাত্রীমাতা। জনক-জননী প্রিয় হে মহাভাগ, হে ভগবান, তারকাসুর বিনাশক, হে মহাতপস্বী প্রভু তোমাকে প্রণাম। দেবতাদের যজ্ঞ রক্ষার জন্য পর্তবতের চূড়ায় তুমি জন্মগ্রহণ করেছ। হে পর্বতী দেবীর পুত্র তোমাকে সতত প্রণাম করি।
কার্তিক পূজার গুরুত্ব ও প্রভাবঃ---
১. কথায় বলে কার্তিকের মতো চেহারা। অর্থাৎ কার্তিকের দেহাকৃতি অত্যন্ত সুন্দর, সুঠাম ও বলিষ্ঠ। এ কারণে কার্তিক পূজার মাধ্যমে দম্পতিরা সুন্দর, সুঠাম ও বলিষ্ঠ চেহারার সন্তানাদি প্রার্থনা করে থাকেন।
২. কার্তিক দেবতাদের সেনাপতি। তিনি অসীম শক্তিধর দেবতা। এজন্য তাঁকে রক্ষাকর্তা হিসেবে পূজা করা হয়্।
৩. কার্তিক নম্র ও বিনয়ী স্বভাবের দেবতা। কিন্তু সমাজের ন্যায়, অন্যায় ও অবিচার নির্মূলে তিনি অবিচল যোদ্ধা্। তিনি তারকাসুর পরাভূত করে স্বর্গরাজ্য উদ্ধার করে স্বর্গেও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমরা কার্ত্তিকের ন্যায় প্রতিষ্ঠার আদর্শ অনুসরণে নীতিমান হতে পারি।
৪. আমাদের সকলকেই কার্তিকের মতো নম্র ও বিনয়ী হওয়া উচিত এবং অন্যায়, অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।
পৌরাণিক উপাখ্যান ও কার্তিক পূজা
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
কার্তিক পূজায় হয় ভারি ধূমধাম,
দেব সেনাপতি তার কার্তিকেয় নাম।
ভক্তি সহকারে কর কার্তিক পূজন,
যে পূজা করিলে হয় দারিদ্র্য খণ্ডন।
দেব সেনাপতি তিনি কার্তিকেয় বীর,
হস্তেতে ধনুক তার অন্য হাতে তীর।
কার্তিকেয় উপাখ্যান শুন দিয়া মন,
তাহারে পূজিলে হয় বিপদ ভঞ্জন।
ব্রহ্মা বরে বলীয়ান সে তারকাসুর,
স্বর্গ হতে দেবগণে করিলেন দূর।
তারকাসুর নামেতে দানব দূর্মতি,
তাহা হতে দেবগণ নাহি অব্যাহতি।
স্বর্গ-ভ্রষ্ট দেবগণ মন্ত্রণা করিল,
কিভাবে তারকাসুর বধ হবে বল।
দেববাক্যে তুষ্ট হয়ে কার্তিকেয় কয়,
বধিব তারকাসুরে কহিনু নিশ্চয়।
ময়ূর পৃষ্ঠেতে চড়ি আরম্ভিলা রণ,
বধিতে অসুরে করে বাণ বরিষণ।
উভয়ের রণ হয় বহুক্ষণ ধরে,
বাণ মারি অসুরের শিরচ্ছেদ করে।
কার্তিকেয় উপাখ্যান হল সমাপন,
কার্তিক পূজা কবিতা লিখিল লক্ষ্মণ।