যে সময় জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়, অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাসে, তখন প্রকৃতিতে আম-জাম-কাঁঠাল ইত্যাদি ফলের সমারোহ। তাই খুব ঘটা করে এদিন শাশুড়িরা ষষ্ঠীপূজা করেন। তারপর নেমন্তন্ন করে নিয়ে আসা জামাইকে আসনে বসিয়ে প্রথমে কপালে দইয়ের ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং দীর্ঘ জীবন কামনায় মা ষষ্ঠীর স্মারক তেল-হলুদ মাখানো সুতা কবজিতে বেঁধে দেন। আশীর্বাদী বস্ত্রাদি জামাইয়ের হাতে তুলে দেন। বিভিন্ন মিষ্টান্নসহ নানা ফল খেতে দেন। অবশ্য জামাই বাবাজিও শ্বশুরবাড়ি ঢোকার সময় যেমন দই-মিষ্টি আনতে ভোলে না, তেমনি আশীর্বাদের পর প্রণামি হিসেবে শাশুড়িকে বস্ত্র দিয়ে থাকে। উল্লেখ্য, শুধুই জামাই নয়, মেয়েও কিন্তু বস্ত্রাদি উপহার হিসেবে পেয়ে থাকে।


অতীতে নারীরা ছিল অন্তঃপুরচারিণী। জীবন কাটত স্বামীদের উপার্জনে, তাদের ভরসায়। তাই জামাইষষ্ঠীতে মেয়ের স্বামীকে তুষ্ট রাখার বাড়তি তাগিদ থাকত মায়েদের। কিন্তু এখনকার শিক্ষিত বৃত্তে বউমারাও আয়–রোজগারে, প্রতিষ্ঠিত। স্বামী-স্ত্রীর রসায়নও অনেকটাই বদলেছে। তাই বহু দিন ধরেই রব উঠছে, জামাইষষ্ঠীর মতো বউমাষষ্ঠীও চালু করা হোক। শাশুড়ি মায়েরা বাড়ির বউটিকেও একইভাবে স্নেহ-আদরে ভালো রাখলে আখেরে ছেলের জীবনটাই তো আরও মধুর এবং সংসার শান্তিময় হবে।



জামাইষষ্ঠীর কবিতা (বিবিধ কবিতা)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আজিকে জামাইষষ্ঠী মহা ধূমধাম,
ঘরে ঘরে উত্সবে মেতে উঠে গ্রাম।
প্রতি ঘরে তৈরি হয় সুস্বাদু ব্যঞ্জন,
শ্বশুরগৃহে জামাতা করে আগমন।

হাসিখুশি কলরব সারাদিন ধরে,
জামাতা সাদাধূতি ও পাঞ্জাবি পরে।
শালীগণ বসে পাশে জামাতার কাছে,
ধন্য হয় সে জামাতা শালী যার আছে।

শাশুড়িরা জামাতাকে করে আপ্যায়ণ,
ইলিশের মাথা দিয়ে সুস্বাদু ব্যঞ্জন।
মিষ্টি ফল রাজভোগ চিনিপাতা দই,
জামাতার পাতে দেন বড় মাথা রুই।

আজিকে জামাইষষ্ঠী পুণ্য শুভদিনে,
জামাতাকে নববস্ত্র দিতে হয় কিনে।
জামাইষষ্ঠীর কাব্য হল সমাপন,
কবিতা লিখিল কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।