ভূত চতুর্দশীর উপাখ্যান (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
জীবনে ভূতদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বারবার। ভূত মানেই নরকঙ্কাল নয়, বেশিরভাগ ভূতেরা মানুষের মত দেখা দেয় ছদ্মবেশে! চ্যাংড়া ভূত, রসিক ভূত, সাহেব ভূত, স্বদেশী ভূত, মেছো ভূত, গেছো ভূত, জলা ভূত, বাঁশ ভূত, বন্ধু ভূত, খাইয়ে ভূত, গাইয়ে ভূত; ভূত অনেক ধরনের। পেত্নিও তাই। ছায়াছায়া বাঁশবন, কালো বিড়াল, চামচিকে, পোড়ো বাড়ি, ফাঁকা ফ্ল্যাট বাড়ি; তেনাদের আভাস ও আবাস। ভুলেও ভাববেন না, সব ভূত ভয়ঙ্কর। বিরক্ত না করলে ভূতেরা মোটেই ক্ষতি করে না মানুষের। তবে দরকার হলে বদমাশ মানুষকে শায়েস্তা করতে তাদের হাত একটুও কাঁপে না।
দীপাবলির এক দিন আগে, অর্থাৎ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়।
দীপাবলির এক দিন আগে, অর্থাৎ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। এই দিনটি কালী মাকে উৎসর্গ করা হয়, যেখানে রাতে কালী মায়ের বিশেষ পূজা করা হয়। বিশেষ করে বাংলায় এটি মা কালীর জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। ভূত চতুর্দশী কালী চৌদাস রূপ চৌদাস এবং নরক চতুর্দশী হিসাবেও পালিত হয়।
আজ ভূত চতুর্দশী বা ছোটি দিওয়ালি। সেদিন ঘরে ঘরে ১৪টি করে প্রদীপ জ্বালানোর রীতি প্রচলিত আছে। এদিন অতৃপ্ত আত্মারা পৃথিবীর বুকে নেমে আসে বলে মনে করা হয়। ভূত চতুর্দশী অনেক জায়গায় নরক চতুর্দশী নামেও পরিচিত।
দীপাবলি উপলক্ষে যেমন চারিদিকে অন্ধকার ঘুঁচে গিয়ে আলোয় ভরে ওঠে তেমনই ভূত চতুর্দশী— এই বিশেষ দিনে আত্মা প্রেতাত্মার বিনাশের শুরু। কথিত রয়েছে, চামুণ্ডারূপী চোদ্দ ভূত দিয়ে অশুভ শক্তিকে ভক্তের বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্যে মা কালী নেমে আসেন মর্ত্যে৷
ভূত চতুর্দশীর দিনে কি কি করা উচিত, কোনটি অনুচিত- কার্তিক দ্বাদশীর পরে এই শুভক্ষণে একটি নতুন ঝাড়ু বা ঝাঁটা কিনে ঘরের ভেতর এবং বাইরের সমস্ত স্থানের নোংরা আবর্জনা ভালো করে পরিষ্কার করে কাঁচা বাড়িতে গোবর জল, পাকা বাড়িতে গঙ্গা জল ছিটাতে ছিটাতে বলবেন ওঁ পবিত্রায় শান্ত্বায় নমঃ, ওঁ পবিত্রায় শান্ত্বায় নমঃ, ওঁ পবিত্রায় শান্ত্বায় নমঃ ওঁ তিনবার উচ্চারণ করতে ভুলবেন না। বিশেষ প্রয়োজনে দশবার বা আঠাশ বার জল ছিটিয়ে উক্ত মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারেন।
নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী তিথিতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে থাকে রাজার অসংখ্য অনুচর হিসাবে পরলোক জগতের ভূত প্রেতরা। তাদের দূরে রাখার জন্য জ্বালানো হয় প্রদীপ।
তিথিটা থাকে চতুর্দশী, তাই জ্বালানো হয় চোদ্দটি প্রদীপ। প্রদীপগুলি মূলত নিবেদিত হয় স্বর্গত পিতৃপুরুষ, প্রেতাত্মা, ধর্ম, রুদ্র, বিষ্ণু, কান্তারপতি বা অরণ্যে অধিষ্ঠিত দেবতাদের উদ্দেশ্যে।
পরলোকগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পারলৌকিক যেকোনও কাজের ফল কখনও বৃথা যায় না। তাঁদের আত্মার আশীর্বাদ সূক্ষ্মভাবে কাজ করে থাকে যিনি তাঁর উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর কাজটি করে থাকেন তার ওপর। এ কথা সূর্যের মতো সত্য। শুভ কাজের ফল যেমন কখনও বৃথা যায় না, তেমনই অশুভ কর্মের ফল দেহধারীকে ভোগ করতেই হবে।

ভূত চতুর্দশী আজি (প্রথম পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভূত চতুর্দশী আজি শুন দিয়া মন,
চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বাল তাহার কারণ।
ভূত হয় ভয়ঙ্কর বিশাল আকার,
শাকচুন্নি পেত্নী আর কহিলাম সার।

ল্যাংটোভূত, চ্যাংড়াভূত কত ভূত আছে,
গেছোভূত দিনরাত ঝুলে থাকে গাছে।
মেছো ভূত সারাদিন খায় শুধু মাছ,
বাঁশভূত থাকে সেথা যেথা বাঁশগাছ।

মরেছে সাহেব ভূত, স্বদেশী ভূতেরা,
দেশে যবে মহামারী হয়েছে কলেরা।
মরে সবে ভূত হয় বন্ধু ভূতও আছে,
নানারূপে সহায়তা পাবে তার কাছে।

খাইয়ে ভূত জঙ্গলে ঘুরিয়া বেড়ায়,
মানুষকে পেলে তারা রক্ত চুষে খায়।
গাইয়ে ভূতেরা খনা সুরে গায় গান,
কবিতা লিখিল কবি লক্ষ্মণ শ্রীমান।