আমেরিকান কবি জন গ্রিনলিফ হুইটার এর "টি গিফট অফ ত্রিটেমিয়াস" ও রবীন্দ্রনাথের "কৃপণ" কবিতা দুটি নিয়ে কিছু আলোচনা করার প্রয়াসে আমার এই ক্ষুদ্র নিবেদন।
দি গিফট অফ ত্রিটেমিয়াস
John Greenleaf Whittier
Tritemius of Herbipolis, one day,
While kneeling at the altar's foot to pray,
Alone with God, as was his pious choice,
Heard from without a miserable voice,
A sound which seemed of all sad things to tell,
As of a lost soul crying out of hell.
Thereat the Abbot paused; the chain whereby
His thoughts went upward broken by that cry;
And, looking from the casement, saw below
A wretched woman, with gray hair a-flow,
And withered hands held up to him, who cried
For alms as one who might not be denied.
She cried, 'For the dear love of Him who gave
His life for ours, my child from bondage save,-
My beautiful, brave first-born, chained with slaves
In the Moor's galley, where the sun-smit waves
Lap the white walls of Tunis!'-'What I can
I give,' Tritemius said, 'my prayers.'-'O man
Of God!' she cried, for grief had made her bold,
'Mock me not thus; I ask not prayers, but gold.
Words will not serve me, alms alone suffice;
Even while I speak perchance my first-born dies.'
'Woman!' Tritemius answered, 'from our door
None go unfed, hence are we always poor;
A single soldo is our only store.
Thou hast our prayers;-what can we give thee
more?'
'Give me,' she said, 'the silver candlesticks
On either side of the great crucifix.
God well may spare them on His errands sped,
Or He can give you golden ones instead.'
Then spake Tritemius, 'Even as thy word,
Woman, so be it! (Our most gracious Lord,
Who loveth mercy more than sacrifice,
Pardon me if a human soul I prize
Above the gifts upon his altar piled!
Take what thou askest, and redeem thy child.'
But his hand trembled as the holy alms
He placed within the beggar's eager palms;
And as she vanished down the linden shade,
He bowed his head and for forgiveness prayed.
So the day passed, and when the twilight came
He woke to find the chapel all aflame,
And, dumb with grateful wonder, to behold
Upon the altar candlesticks of gold!
কবির কবিতাটির ভাবনা টা প্রথমে পর্যালোচনা করে দেখা যাক ....
হারবিপোলিসের গরিব পাদ্রী ট্রাইটেমিয়াস, একদিন বেদীর পায়ে হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন।হটাৎ তাঁর কানে এলো এক শোচনীয় কণ্ঠস্বর, যেন আর্তনাদে হারানো আত্মার মতো।তিনি জানলার দিকে মুখ বাড়ালেন।কি দেখলেন তিনি? ধূসর চুলের একটি পাকা চুল এক অসহায় বৃদ্ধা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে ভিক্ষা চাইছে।আমার প্রথম সন্তানকে তুমি দাসত্ব থেকে রক্ষা করো প্রভু।গরিব পাদ্রী বললেন আমি আর তোমাকে কি দিতে পারি একমাত্র প্রার্থনা ছাড়া? বৃদ্ধা বললেন এভাবে আমাকে উপহাস করোনা।প্রার্থনা নয়, আমাকে দাও কিছু স্বর্ণমুদ্রা যা দিয়ে আমি আমার সন্তান কে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারি।ট্রাইটেমিয়াস বললেন সে সামর্থ তো আমার নেই হে নারী? বৃদ্ধা তখন বললেন, ঠিক আছে আমাকে দাও তবে রূপোর মোমবাতি যা রাখা আছে ক্রুশিকার উভয় পাশে।ঈশ্বর কৃপণতা থেকে তাদেরকে বাঁচাতে পারেন,অথবা পরিবর্তে তিনি আপনাকে সোনার উপহার দিতে পারেন। ট্রাইটেমিয়াস বলেছিলেন, 'ঠিক আছে তোমার কথা মতোই, তুমি যা চাও তা নিয়ে যাও এবং তোমার সন্তানকে মুক্তি দাও।
তিনি মাথা নিচু করলেন, হাত উঠলো কেঁপে এবং ক্ষমার জন্য দোয়া করলেন ঈশ্বরের কাছে।দিন কেটে গেল, আর যখন গোধূলি এল তিনি জেগে উঠলেন আর কৃতজ্ঞ অবাক সঙ্গে দেখলেন বেদীটির উপরে সোনার মোমবাতি!
এই হচ্ছে আমেরিকান কবি জন গ্রিনলিফ এর সারমর্ম!
চলুন যাওয়া যাক এবারে কবিগুরুর বিখ্যাত কবিতা "কৃপণ" কবিতা টি তে।
আমি ভিক্ষা করে ফিরতেছিলেম
গ্রামের পথে পথে,
তুমি তখন চলেছিলে
তোমার স্বর্ণরথে।
অপূর্ব এক স্বপ্ন-সম
লাগতেছিল চক্ষে মম--
কী বিচিত্র শোভা তোমার,
কী বিচিত্র সাজ।
আমি মনে ভাবেতেছিলেম,
এ কোন্ মহারাজ।
আজি শুভক্ষণে রাত পোহালো
ভেবেছিলেম তবে,
আজ আমারে দ্বারে দ্বারে
ফিরতে নাহি হবে।
বাহির হতে নাহি হতে
কাহার দেখা পেলেম পথে,
চলিতে রথ ধনধান্য
ছড়াবে দুই ধারে--
মুঠা মুঠা কুড়িয়ে নেব,
নেব ভারে ভারে।
দেখি সহসা রথ থেমে গেল
আমার কাছে এসে,
আমার মুখপানে চেয়ে
নামলে তুমি হেসে।
দেখে মুখের প্রসন্নতা
জুড়িয়ে গেল সকল ব্যথা,
হেনকালে কিসের লাগি
তুমি অকস্মাৎ
"আমায় কিছু দাও গো' বলে
বাড়িয়ে দিলে হাত।
মরি, এ কী কথা রাজাধিরাজ,
"আমায় দাও গো কিছু'!
শুনে ক্ষণকালের তরে
রইনু মাথা-নিচু।
তোমার কী-বা অভাব আছে
ভিখারী ভিক্ষুকের কাছে।
এ কেবল কৌতুকের বশে
আমায় প্রবঞ্চনা।
ঝুলি হতে দিলেম তুলে
একটি ছোটো কণা।
যবে পাত্রখানি ঘরে এনে
উজাড় করি-- এ কী!
ভিক্ষামাঝে একটি ছোটো
সোনার কণা দেখি।
দিলেম যা রাজ-ভিখারীরে
স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে,
তখন কাঁদি চোখের জলে
দুটি নয়ন ভরে--
তোমায় কেন দিই নি আমার
সকল শূন্য করে।
আলোচনা:-
শিল্পের মাপকাঠিতে রবীন্দ্র কাব্যের এক অসাধারণ সৃষ্টি এই 'কৃপণ' কবিতাটি।ভিক্ষা করে ফেরার পথে সন্ন্যাসী দেখলেন রাজাধিরাজ চলেছেন সেই পথে তাঁর স্বর্ণরথে। সন্ন্যাসী মনে মনে ভাবলেন তাঁর ভাগ্যের চাকা বুঝি এবারে ফিরলো।হলো ঠিক উল্টো।রাজা রথ থেকে নেমে এলেন আর "আমায় কিছু দাও গো" বলে সন্ন্যাসীর কাছে হাত পাতলেন।সন্ন্যাসী তো দিশেহারা। রাজাকে সে কি আর দিতে পারে? ভেবে সে কোনো কুলকিনারা পায়না।কি আর করা ভিক্ষের ঝুলি থেকে এক ক্ষুদ্র কণা তুলে দিলো রাজার হাতে।আর তাই নিয়েই রাজা খুশি হয়ে বিদায় নিলেন।সন্ন্যাসী বাড়ি ফিরে তাঁর ভিক্ষার পাত্রটি উজাড় করে অবাক চোখে দেখলেন যে যে ক্ষুদ্র কণাটি সে রাজাকে দিয়েছিলো তা ফিরে এসেছে সোনার কণা হয়ে। সন্ন্যাসীর দু চোখে এলো জল। ভাবলো রাজাকে তখন কৃপণ না হয়ে সমস্ত ভিক্ষার ঝুলি কেন উজাড় করে দিলাম না।
এই হচ্ছে মোটামুটিভাবে 'কৃপণ' কবিতার সারমর্ম।
রবীন্দ্রনাথ 'কৃপণ'কবিতা লিখেছিলেন বাংলা কবিতার আদি ছন্দ স্বরবৃত্তে আর হুইটার "ত্রিটেমিয়াসের উপহার" লিখেছিলেন ইংরেজি কবিতার আদি ছন্দ আয়াম্বিক পেন্টামিটার এ।দুজনের উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল একটাই যে ধর্মীয় বার্তাটি সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়া।
তাই দুটি কবিতায় হয়েছে সফল কবিতা।রবীন্দ্রনাথের 'কৃপণ' কবিতায় আমরা দেখলাম সন্ন্যাসী যা রাজার হাতে তুলে দিয়েছিলেন পরিশেষে তা ফিরে এলো স্বর্ণ হয়ে আর হুইটারের কবিতা তে দেখলাম বৃদ্ধা ভিক্ষুককে দান করা রুপোর মোমদানি টি ফিরে এসেছে সোনার মোমদানি হয়ে। দুই কবি এবং এই দুটি কবিতার মধ্যে কি অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পেলাম যা সত্যি অবাক করে।দুটো কবিতার বার্তা এক। আর দুটো কবিতাই দুটি ভিন্ন ভাষায় সুপ্রতিষ্ঠিত আপন সৌন্দর্যে।
টিকা:
তাহলে কি ধরে নেবো জ্ঞানী মানুষেরা একই ভাবে চিন্তা করেন?
wise man thinks alike
আসরের সব কবিকে জানাই আমার অন্তরের ভালোবাসা,প্রীতি,শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।