আমাদের সহায়সম্বল এই দুটি দিন পঁচিশে বৈশাখ এবং বাইশে শ্রাবণ। বিশাল মহাজীবনের আবির্ভাব পৃথিবীতে প্রতিদিন ঘটে না।ঘটেছিলো সেই মহান দিন টিতে ....
রাত্রি হল ভোর
আজি মোর
জন্মের স্মরণপূর্ণ বাণী,
প্রভাতের রৌদ্রে-লেখা লিপিখানি
হাতে করে আনি
দ্বারে আসি দিল ডাক
পঁচিশে বৈশাখ।
২৫ বৈশাখের গুরুত্ব বিশেষ করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালীর জীবনে অপরিসীম।
কবির দীর্ঘ জীবনের সেই অপূর্ব-জীবনসংগীত ধীরে ধীরে এসে থেমে দাঁড়াল এক বাইশে শ্রাবণের দিনে। বাইশে শ্রাবণ — এই দিনটি কবির মহাপ্রয়াণের তাৎপর্য নিয়ে আমাদের জীবনে ফিরে আসে বারবার।অঝোর ঝরা শ্রাবণের এমন একটা দিনে রবীন্দ্রনাথ বিদায় নিয়েছিলেন আমাদের কাছ থেকে। রবীন্দ্রনাথের তিরোধানের পর থেকেই, আমাদের বাঙালিদের বুকে কোথায় যেন একটা গভীর বেদনা ছড়িয়ে গেছে। বছরের অন্য সময় সেটি গোপন থাকলেও বাইশে শ্রাবণে তা একেবারে প্রকাশ্য হয়, আমাদের সকলের কাছে বেদনাবিথারী হয়ে ওঠে। বাইশে শ্রাবণ আমাদের সবাইকে বারে বারে ডাক দিয়ে যায়।বাইশে শ্রাবন জীবন ও সৌন্দর্যের সম্মিলনের দিন। এই দিনটি আমাদের কাছেও আত্ম আবিষ্কারের মুহূর্ত। কবিকে নতুন করে পাবার, জানবার সুযোগ হয়।
পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব আর বাইশে শ্রাবণ তাঁর প্রয়াণ। আবির্ভাব আর তিরোভাব — এই দুয়ের মাঝেই সত্তার বিকাশ ও পূর্ণতা।
‘পঁচিশে বৈশাখ চলেছে
জন্মদিনের ধারাকে বহন করে
মৃত্যুদিনের দিকে’।
রবীন্দ্রনাথ যেমন জীবন অনুভবের বিচিত্র স্রষ্টা, তেমনিই মৃত্যু অনুভবও সেই টানে এসেছে বিচিত্রতায়।
জন্ম ও মৃত্যু — সূচনা ও সমাপ্তি দুটিই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমাদের জাতীয় জীবনে দুটিই চিরস্মরণীয় — পঁচিশে বৈশাখ ও বাইশে শ্রাবণ। বিশেষ করে এই দুটি দিন আমাদের একান্তভাবে কবির অনুধ্যানে ব্রতী হবার দিন, চিরশুদ্ধির দিন।
কবিতা আসরের সকলকে ধন্যবাদ!