জীবনানন্দের 'বনলতা সেন যেমন বাঙালি মাত্রই যেমন এক ধরণের নস্টালজিয়া , ঠিক একইভাবে আলফ্রেড, লর্ড টেনিসন এর "‘দ্যা লটোস ইটার’ হয়ে গেছে নস্টালজিক কবিতা।
"Courage!" he said, and pointed toward the land,
"This mounting wave will roll us shoreward soon."
In the afternoon they came unto a land
In which it seemed always afternoon.
All round the coast the languid air did swoon,
Breathing like one that hath a weary dream.
Full-faced above the valley stood the moon;
And like a downward smoke, the slender stream
Along the cliff to fall and pause and fall did seem.
A land of streams! some, like a downward smoke,
Slow-dropping veils of thinnest lawn, did go;
And some thro' wavering lights and shadows broke,
Rolling a slumbrous sheet of foam below.
They saw the gleaming river seaward flow
From the inner land: far off, three mountain-tops,
Three silent pinnacles of aged snow,
Stood sunset-flush'd: and, dew'd with showery drops,
Up-clomb the shadowy pine above the woven copse.
The charmed sunset linger'd low adown
In the red West: thro' mountain clefts the dale
Was seen far inland, and the yellow down
Border'd with palm, and many a winding vale
And meadow, set with slender galingale;
A land where all things always seem'd the same!
And round about the keel with faces pale,
Dark faces pale against that rosy flame,
The mild-eyed melancholy Lotos-eaters came.
Branches they bore of that enchanted stem,
Laden with flower and fruit, whereof they gave
To each, but whoso did receive of them,
And taste, to him the gushing of the wave
Far far away did seem to mourn and rave
On alien shores; and if his fellow spake,
His voice was thin, as voices from the grave;
And deep-asleep he seem'd, yet all awake,
And music in his ears his beating heart did make.
They sat them down upon the yellow sand,
Between the sun and moon upon the shore;
And sweet it was to dream of Fatherland,
Of child, and wife, and slave; but evermore
Most weary seem'd the sea, weary the oar,
Weary the wandering fields of barren foam.
Then some one said, "We will return no more";
And all at once they sang, "Our island home
Is far beyond the wave; we will no longer roam."
বাংলা অনুবাদ :-
সাহস রাখ! [ইউলিসিস] বলে ইশারা করলেন [দূরে] ভূমির দিকে।
শীঘ্রই এই অধিরোহী [পর্বতাকৃতির] ঢেউ আমাদেরকে উপকূলে নিয়ে যাবে,
বিকেল বেলায় এলো তারা উপকূল ভূমিতে
যেখানে চিরকালই যেন মনে হয় বিকেল বেলা।
পুরো উপকূলব্যাপী অলস বাতাস আছড়ে পড়ে।
স্বপ্ন-ক্লান্ত কেউ যেন শ্বাস ফেলে।
উপত্যকার শিরোপরি হাসে পূর্ণিমাশশী।
ধোঁয়ার কুণ্ডলীসম পাক খেয়ে বহে ছোট নদী।
পাহাড়ি ধাপে ধাপে থেমে থেমে বয়ে যায়।
নদীর দেশ এ দেশ, নীচের দিকে বহমান ধোঁয়ার মতো নদী,
পাতলা ঘোমটার মতো পতিত
কোন নদী নামে নীচের দিকে
কোনটা আলো ছায়াতে কেঁপে কেঁপে চলে
চলে যায় অলস ফেনা ছড়াতে ছড়াতে সাগরের দিকে
অনেক দুরের ভেতরের তিনটি পাহাড়ের চূড়া হতে,
পুরনো তুষারে আবৃত তিনটি চূড়া
সূর্য অস্ত যাবার সময় লালিমাযুক্ত আর রাতের শিশিরে সিক্ত
পাইন লতার ঘন ছায়ার নীচে।
মোহনীয় রক্তিমাভায় সূর্য নামে পাটে-
পশ্চিমাকাশ লালাভাযুক্ত; পর্বতের উপত্যকায় ছাড়ানো
অনেক ভেতরে দেখা যায় পাহাড়ি হলুদ সমতল ভূমি
পাম গাছে ঘেরা, অনেক খাজ খাঁজ ঢালু,
ফসলের মাঠ আর সরু গুল্মে ছাওয়া।
এ ভূমে সবকিছু সদা সর্বদা একই রকম মনে হয়!
জাহাজের খোলের চারপাশে সুরুজের বর্ণচ্ছটায়।
কালো ফ্যাকাসে মুখ,
অধনির্মিলিত নয়নে পদ্মভুক্ত বিমর্ষজনেরা এলো।
সেই মোহনীয় লতার কতক শাখা-প্রশাখা আনল বয়ে তারা।
ফুলে ভরা, ফলে ভরা, তাদের সবাইকে দিল।
প্রত্যেকে, যারা এ ফল গ্রহণ করল।
খেল এবং ভাবল
দূরে, বহু দূরে গেছে সমুদ্র, যেন বিলাপ করে,
তীর থেকে বহু দূরে, কেউ যদি কথা বলে, তার কথা
কবর থেকে আসা ক্ষীণ কণ্ঠস্বর যেন,
মনে হয় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তবু জেগেই রয়,
গান বাজে কানে তার হৃদস্পন্দনের।
তারা বসে আছে হলুদ বালু চরে,
মাঝামাঝিতে চন্দ্র আর সূর্যের
ভাল লাগে ভাবতে পিতৃভূমির কথা।
ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, দাসদাসীর কথা; কিন্তু তারপরও
ক্লান্ত সাগর, ক্লান্ত বৈঠা,
অহেতুক ফেনা তোলা বিরাট ক্লান্ত জলরাশি।
অতঃপর কে যেন একজন বলে উঠল, আমরা আর ফিরব না।
সবাই তখনই গেয়ে উঠল, “আমাদের বাড়ি
অনেক দূরে, সাগরের ওপারে আমরা আর দূরে ভ্রমণ করব না।
কবিতার ১ম ও ২য় অংশের গঠন এক রকম নয়। প্রথম অংশ ৯ লাইনের ৫টি স্তবকে বিভক্ত। এগুলোকে 'স্পেনসারিয়ান স্তবক' বলে কারন স্পেনসার (Edmund Spencer) তার দ্যা ফেয়ারী কুইন এ এই ধরনের ৯ লাইনের স্তবক ব্যবহার করেছিলেন। এই স্তবকগুলোতে ছন্দ বিন্যাস ‘ABABBCBCC’ এই স্তবক গুলোর ১ম ৮ লাইন এর মাত্রা হল পঞ্চমাত্রিক। কিন্তু ৯ম লাইনটি ৬ মাত্রার। এটা ‘alexandrine’ নামে পরিচিত। ২য় অংশটি - যা নাবিকদের সমবেত সঙ্গীত নামে পরিচিত। এর গঠন এলোমেলো। এর কোন মাত্রাবিন্যাস নেই।
আলফ্রেড লর্ড টেনিসন তাঁর ‘দ্যা লটোস ইটার’ কবিতায় একদল নাবিকের অন্তহীন সমুদ্রযাত্রা শেষে অজানা এক স্থানে অবতরণ করার কথা বলেছেন। গ্রীক পুরাকাহিনী দ্বারা প্রভাবিত এ কবিতায় আমরা হোমারের ওডিসি মহাকাব্যের একজন নায়ক ইউলিসিসের গৃহে ফেরা প্রত্যক্ষ করি। হোমারের অডিসি মহাকাব্যের নায়ক অডিসিয়াস (ইউলিসিস) ট্রয় যুদ্ধ শেষে তিনি দেশে ফেরার পথে জাহাজসহ নাবিকদের নিয়ে নানা বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হন। আটকা পড়ে থাকেন নানা সময়ে নানা দ্বীপে। নাবিক দল সীমাহীন সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তারা যেন ক্লান্ত অবসন্ন। এভাবেই কাটতে থাকে বছরের পর বছর। তার সঙ্গী নাবিকেরা ঘরে ফেরার তরে আকুল। কিন্তু সহজে ফেরা হয় না তাদের। তাদের জাহাজ বার বার আটকে যায় নানা বাধা বিপত্তির মুখে। এ কবিতায় সেই সব হতাশ নাবিকদের মনের আর্তির প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। কবি টেনিসন তাঁর এ কবিতায় ইউলিসিসের সঙ্গী নাবিকদের হৃদয়ের মর্মবেদনা এবং শেষে বাড়ি ফেরার চিন্তা চেতনার হাল ছেড়ে দেয়ার অসহায় দিকটির অসাধারণ প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
কবিতাটি শুরু হয়েছে ইউলিসিস (ইউলিসিস আইরিশ লেখক জেমস জয়েস-এর কালজয়ী সৃষ্টি। ১৯২২ সালে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। অধিকাংশ সাহিত্য সমালোচকরা ইউলিসিস-কে ইংরেজি ভাষায় লিখিত বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে গণ্য করে থাকেন। ইউলিসিস-এর কাহিনী একটিমাত্র দিনকে ঘিরে।)
এর একটি আদেশের মাধ্যমে, যেখানে তিনি তার নাবিকদেরকে সাহস রাখতে বলছিলেন। কারন তারা অনেক দূর থেকে একটি নতুন দ্বীপের দেখা পেয়েছিলেন। অবশেষে সেদিন বিকেলবেলা তারা এই দ্বীপে প্রবেশ করেন। যেখানে চিরকাল যেন বিকেল বেলা বিদ্যমান। যেখানে ঝলমলে বহমান নদী সাগরের সাথে মিশেছে। পাহাড় চুড়া গুলো ছিল তুষারাবৃত। সেখানে মায়াময় নিরীহ দৃষ্টির লটোস খাদকদের সাথে তাদের দেখা। তারা তাদের কাছে লটোস ফুল আর ফল নিয়ে আসে। যারাই এই লটোস ফুল বা ফল খায় তারাই যেনো এক গভীর আচ্ছন্নতায় ভোগে। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মতো মনে হয়। পাশের মানুষের কথাও ভালো ভাবে বোঝা যায় না। মনে হয় বসে বসে তারা সুন্দর স্বপ্ন দেখছে। তাদেরকে একরাশ ক্লান্তি চেপে ধরে। যেই এই ফল খেয়েছে তার মুখ থেকেই বের হয় একই কথা, ‘আর বাড়ি ফিরবো না।’
নাবিকগণ হাল ছেড়ে দিয়ে নিজ গৃহের আশা ত্যাগ করে নিজেরাই নিজেদের মাঝে সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করছেন। তারা চায় নিরাপদ আশ্রয়, নিরাপদ তন্দ্রা আর অপার শান্তি। তারা জানে, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত কিন্তু ফেরার কোনো পথ খোলা নেই। তাই তারা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে এই বলে যে, শুধু অহেতুক বিলাপ করার কোনো অর্থ নেই, তার চেয়ে এই ভালো, এই সীমাহীন সমুদ্র, এই নির্জন দ্বীপ, তারার আকাশ, জলের কুলকুল ধ্বনি, উত্তাল তরঙ্গমালা এসব দেখে দেখেই সময় পার করবে তারা। শেষের স্তবকগুলোতে কবি তাদের বানোয়াট দেবদেবীদের সমালোচনা করেছেন। তারা বসে/শুয়ে মদে চূড় হয়ে আছে কিন্তু মানবজাতীর প্রতি তাদের কোন চিন্তা নেই। তারা নিজেদের মাঝে ঝগড়া ও কলহে ব্যস্ত আর এর সাথে পৃথিবীর মানুষদেরও দূর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
তারা ভাবে সময় তো অনেক পার হয়ে গেছে, তাদের স্ত্রী সন্তানদের কাছে তখন ফিরে গেলে তাদেরকে ওরা ভূত বলে সন্দেহ করবে, সন্তান আর পরিবারের শান্তি নষ্টের কারণ হবে তারা। তারা ভাবে যা ভেঙ্গে গেছে সেটা তেমনি থাক, তারা এই সীমাহীন সমুদ্রের এই দ্বীপে লটোস আহার করে প্রকৃতির শোভা নিরীক্ষণ করবে আজীবন। নাবিকরা কামনা করছে এখন একান্ত বিশ্রাম তারা দেখেছে যুদ্ধ, হানাহানি, শুনেছে সমুদ্রের ভয়াল গর্জন, এবার আর তারা সমুদ্রে যেতে চায় না, যত দিন বেঁচে থাকবে তারা এই দ্বীপে থাকতে চায় দৌড়ে বেড়াতে চায় শস্য ক্ষেতের ভেতরে, মিশে যেতে চায় প্রকৃতির সাথে, আর তারা নিজেদের যুক্ত করতে চায় না কঠোর শ্রমে। গৃহ আজ তাদের কাছে অতীত ইতিহাস। কোনোদিন হয়তো সেখানে ফেরা হবে না তাদের।
কবি টেনিসন তাঁর এই কবিতায় ট্রয় যুদ্ধ ফেরত একদল নাবিকের অসহায়ত্বের মাধ্যমে তাদের সান্ত্বনা খোঁজার দিকটি পরম নিষ্ঠার সাথে তুলে ধরেছেন।
পৃথিবীতে মানুষ তার দীর্ঘ সময় কাটায় নানা কর্ম প্রবাহের মাঝে, পাড়ি দেয় জীবনের অনেকটা পথ। জীবনের পথে পথে চলতে গিয়ে সে প্রত্যক্ষ করে কতো না আনন্দের উৎস, কতো না বিস্ময়, কতো না হতাশা, শেষে তার মন ক্লান্ত হয় নিজের মধ্যে ফেরার জন্য কর্মকাণ্ড দিনের শেষে মানব চায় এক দণ্ড শান্তি। একটু নিরুপদ্রবে নিদ্রায় ঢলে পড়তে চায়। কারণ জীবনের পথ পাড়ি দিতে দিতে সে আজ বড়োই ক্লান্ত। মানব জীবনের এই অন্তহীন পথ চলা এবং তার বিশ্রামের যে চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা সেই আদি বিষয়টিই প্রকাশ হয়েছে এই কবিতায়।
উপসংহার :-
কবিগুরুর কিছু চরণে যেন এই কবিতার সঙ্গতি খুঁজে পেলাম। তাই তার কয়েকটি চরণ তুলে আমার এই আলোচনার ইতি টেনে প্রস্থান করলাম।
"ওরা প্রাণ-ঝরণার উচ্ছল ধার
ঝরিয়া ঝরিয়া বহে অনিবার,
চিরতাপসিনী ধরণীর ওরা শ্যামশিখা হোমানল"
ওপরের টা হলো ললিত চাঞ্চল্য
এবারে চলুন দেখি দুর্ললিত চাঞ্চল্য :-
"হা রে, রে রে, রে রে,
আমায় ছেড়ে দে রে, দে রে—
যেমন ছাড়া বনের পাখি
মনের আনন্দে রে।"
" আমায় রাখবে ধ’রে কে রে—
দাবানলের নাচন যেমন সকল কানন ঘেরে,
বজ্র যেমন বেগে
গর্জে ঝড়ের মেঘে,
অট্টহাস্যে সকল বিঘ্ন- বাধার বক্ষ চেরে॥
ভালোবাসায় ভালো থাকুন সবাই।
তথ্যসূত্র
https://www.storiesbd.com/2020/02/the-lotos-eaters-alfred-tennyson-summary-analysis-and-discussion-in-bangla.html