কবিতার টুকিটাকি
কবিতাকে উপভোগ করে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন অভ্যেসবশে। এর মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি কান দিয়ে শুনে কবিতা উপভোগ করা। অর্থাৎ আবৃত্তি শুনে। যার ফলে আবৃত্তির সিডি কেনার প্রবণতা বেশি কবিতার বই কেনার থেকে। আবার আর এক শ্রেণী আছে কবিতাকে উপভোগ করে আবেগ দিয়ে। কেও উপভোগ করে মস্তিস্ক দিয়ে। প্রত্যেকের লক্ষ্যসন্ধান কিন্তু একটাই। একটু স্বস্তি, একটু সুখের ছায়া ও একটু শান্তি। আর কিছু সংখ্যক মানুষ আছে কবিতার ধার ধারে না। মনে করে কবিতা পড়া বা লেখা সময়ের অপচয় ব্যতীত কিছু নয়। মনে করে কবিতা একটা আবর্জনা ও ছাইপাঁশ। কেও বা কবিতার কাছে কিছু পাওয়ার চেষ্টা করে, হয়তো কিছু শান্তির ছায়া পেয়ে থাকে কবিতার কাছ থেকে। তাই সামগ্রিকভাবে কবিতা এক রহস্য ঠিক ভালোবাসার মতো। আমরা যে পরস্পরকে কেন ভালোবাসি অনেক গবেষণা করেও এর উত্তর মেলেনা। একইভাবে কবিতা কেন লিখি ,পড়ি বা ভালোবাসি আমরা নিজেরাই জানিনা। আমরা সৌখিন কবিরা মেধাচর্চা করে শেষ পর্যন্ত কবিতার রহস্যময় জগতে ঢোকার পাসপোর্ট টা বোধয় পেয়ে গেছি । সবারই স্বাধীনতা আছে নিজের মতো করে ভাবার। তবে শ্রমের শর্তটি অস্বীকার করলে কিছু প্রাপ্তি হবেনা। যে কোনো বিষয়ে কিছু অর্জন করতে গেলে সাধনা অপরিহার্য। কবিতা একটা ভাষাভিত্তিক শিল্প। তাই ভাষাটি অন্তত ভালোভাবে শিখতে হবে। কবিতা সীমাহীন। এর কোনো পরিধি বা সীমা নেই। বহু বিষয়ের মতো কবিতা শোনার, বোঝার, সৃষ্টি করার ক্ষমতাটিকে সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইদানিং কালে তো কবিতার বৈচিত্র্য ও প্রয়োগে এতো বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে যা কল্পনাতীত। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম কবিতাকে এক সুন্দর রূপ দেবার জন্যে সার্বজনীন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এত একটা বিশাল ভালো লক্ষণ। এটা একটা মানুষের আবহমান সংস্কৃতি বললে বোধয় অত্যুক্তি হবেনা। মাতৃভাষাসূত্রে এই কৃতিত্বের অংশীদার হয়ে গর্ববোধ করি। সমস্যাটি হলো কবিতার স্ট্যান্ডার্ড। এটার দিকে আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখা দরকার। আমাদের কাছে কবিতা হয়ে উঠুক একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের লক্ষ্য হবে আরো বেশি বেশি করে পাঠক কে কবিতায় আকৃষ্ট করা। কবিতা নিয়ে অনিঃশেষ পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে গত পঞ্চাশ ষাট বছর ধরে। অনেক সংলাপ বিনিময় হয়েছে এ নিয়ে, এখনো তা অব্যাহত। কবিতা শিল্প কে চ্যালেঞ্জ করার কোনও অবকাশ নেই। চেতনে-অবচেতনে আমাদের শুদ্ধ কবিতা চাই, দুর্বোদ্ধ কবিতা নয়। আমাদের কবিতা শোনার ও পড়ার অভ্যেস চালিয়ে যেতে হবে। কবিতা শিল্পের একটি মহত্তম শাখা। বিভিন্ন ভাষায় কাঠামোর বিচারে কবিতার বৈচিত্রতা শত শত। চিত্রকল্পের সাহায্যে আন্দোলিত হয়ে আবেগ, অনুভূতি দিয়ে কবিতা শিল্প কে সুন্দরতম করে তুলতে হবে। পৃথিবীতে তাবৎ বিষয়কে পুঁজি করে কবিতা সুমধুর প্রতিযোগিতা যুক্ত করে। কবিতা শিল্পের আদিমতম শাখা। কবিতা যেভাবেই লেখা হোকনা কেন, যদি মেলোডির অভাব থাকে তবে কবিতা সামগ্রিকভাবে বাঙালি পাঠকের আনুকূল্য পাবেনা। গানের মতো সাধারণ পাঠকের কাছে তাল, লয়, চলন, গতি কবিতার অঙ্গ। ভালো কবিতা লিখতে গেলে চাই ভিতর থেকে প্রগাঢ় আন্তরিকতা ,অ্যাকাডেমিক দর্শনচর্চার তুমুল প্ররোচনা। কবিতা লিখতে বসে শৈল্পিক পরিণতমনস্কতা অদ্বিতীয় একটি সাফল্য এনে দিতে পারে। কবিতার বিষয়বস্তুর প্রতি আন্তরিক হওয়া চাই।
কবিতার ভালোবাসায় ভালো থাকুন সবাই আসরের বন্ধুরা।
টীকা :
যারা আমার এই লেখাটি পাঠ করলেন, তাদের অমূল্য সময় থেকে একটু সময় ঋণ করার জন্যে ঋণী হয়ে রইলাম, যে ঋণ শোধ হবার নয়। .