যবে থেকে কবিতা লেখা শুরু করেছি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা বানান সমস্যা সত্যি একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সময় সময়। অনেকসময় লিখতে গিয়ে বিভ্রান্ত ও বিহ্বল হই কোনটা ঠিক ? একটা অস্বচ্ছন্দতা ও কেমন একটা মনের ভেতর অস্থিরতা হতে থাকে। কবিতা লেখার মুডটাই যেন চলে যায়।
কি লিখবো বলুন?
যদি শিক্ষক তাহলে '-মাসটারমশায় না মাষ্টারমশাই ?
আর যদি ক্রেডিট কার্ড হয় ? কি হবে 'মাষ্টার কার্ড ?
একবার 'রাখি' অথবা 'রাখী বানান টি নিয়ে আসরের কবিবন্ধু 'অনিরুদ্ধ বুলবুলের" সঙ্গে হলো মৃদু তর্ক !
একটা কবিতায় উনি লিখেছিলেন 'রাখি' । আমি বললাম রবীন্দ্রনাথ তাঁর সব গানে ও কবিতায় কিন্তু 'রাখী' ব্যবহার করেছেন! উনি বললেন দুটোই ঠিক ! আমিও এদিক সেদিক ঘেটে দেখলাম দুটো বানান ই ঠিক। উনি অগত্যা বন্ধুত্বের খাতিরে পরে 'রাখী' করে দিলেন।
কোনো এক সময় বানান শেখাবার এক সহজ উপায় ছিল।
উদাহরণ :- 'কুজ্ঝটিকা' বানান
কু-- ক এ হ্রস্ব-উ
জ্ঝ- ঝটপট
টি-- ট-এ হ্রস্ব-ই
কা-- ক-এ আ-কার
জটিল বানানের এ-হেন সরলীকরণ বাংলা শিক্ষকরা নিশ্চয়ই বরদাস্ত করবেন না এখন ।
তবে অনেক বাংলা শব্দের বানান যে খুব সহজ সরল নয়, এ কথা তাঁরাও স্বীকার করবেন।
'পরিষ্কার'
'পুরস্কার'
'আবিষ্কার'
'তিরস্কার'
একনাগাড়ে যদি আমাকে বলা হয় বানানগুলি করতে হয়তো ভুল করতে পারি ।
'আকাঙ্ক্ষা ' - হলফ করে বলতে পারি এই বানানটি লিখতে অনেকেই অকৃতকার্য হবেন।
'কনীনিকা',
'কিরীটী',
'পিপীলিকা',
'শারীরিক'
উপরের বানান করতে অনেকেরই হ্রস্বদীর্ঘ পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারেন।
হ্রস্ব-উ দীর্ঘ-ঊ-র ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
উদাহরণ:-
'নূপুর'
'দুর্গা'
'দূর্বা'
'উষা'
'ঊর্মি'
'ঊর্ধ্ব' ইত্যাদি শব্দগুলোকে।
'ঊষা ঊষসী ঊর্বশী' পুরানো বানানগুলো বর্জিত না-হলেও বিকল্প বানান 'উষা উষসী উর্বশী'র প্রয়োগ ক্রমবর্ধমান। 'দূর্গা' বানান ব্যাকরণ বা অভিধানসম্মত না-হলেও 'দুর্গা'-র এই দুর্গতি প্রায়শই আমাদের গোচরীভূত হয়ে থাকে।
কোনোএক সময় পুজোর আগে দেখা গেলো বিশাল এক সাইনবোর্ড এক দোকানের সামনে।
'পুজোর বাজার এখানেই করুণ'
উপরিউক্ত বিজ্ঞাপনটি দেখে বাংলা বানানের করুণ অবস্থার আলোচনা করেছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় 'দেশ' পত্রিকায় 'সুনন্দর জার্নালে'।
বিজ্ঞাপনে বা সাইনবোর্ডে বাংলা বানানের বিপর্যয়ের ট্র্যাডিশন এখনো বন্ধ হয়নি।
উদাহরণ :- 'বিনাপাণি পুস্তক ভাণ্ডার'।
বইয়ের দোকানের বোর্ডে এই অপূর্ব ভুল বানান ? হালচাল দেখে বীণা বর্জন করেছেন কি দেবী সরস্বতী ?
সরস্বতীর সঙ্গে তার বোন 'লক্ষী' ও রেহাই পাচ্ছেনা।
যে লক্ষ্মী অন্নদাত্রী, তাকে নিয়েও চলছে হেনস্থা।
'লক্ষী' বা 'মা লক্ষী' লেখা দোকানের নাম প্রায় প্রতি পাড়াতেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নির্দ্বিধায় 'গিরিশ' কে গিরীশ' বানিয়েছেন;
এই ধরনের ভুলগুলো হয়তো অনিচ্ছাকৃত, অনবধানতাবশত অথবা অজ্ঞতাপ্রসূত।কিন্তু যদি আমরা একটু সাবধান হই তাহলে বানান ভুলের সংখ্যা কমানো যেতে পারে বলে আমার ধারণা।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা বানান লিখতে গিয়ে সত্যি বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই।
বাড়ি না বাড়ী লিখবো ,পাখি না পাখী? শাড়ি না শাড়ী লিখবো নিয়ে বেশ সমস্যা হয় মাঝে মাঝে। কি অথবা কী?
বাংলা বানানের মূল সমস্যাগুলো হল ই, ঈ, উ, ঊ-কার যুক্ত শব্দগুলোকে নিয়ে, ক্রিয়ার কিছু কথ্য রূপ নিয়ে, ঙ এবং অনুস্বারের (ং) ব্যবহার নিয়ে, শব্দের শেষে বিসর্গের (:) প্রয়োগ নিয়ে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আর সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা বাংলা বানানকে জটিলতার পাশ থেকে অনেকটা মুক্ত করবে এই আশা করা যায়।
আমার এই লেখাতে জানিনা কটা বানান ভুল করলাম। পরিবর্তনের প্রয়োজন থাকলে অনুগ্রহ করে উল্লেখ করতে দ্বিধাগ্রস্থ হবেন না। আমরা যদি এই আসরে সবাই সবাইকে বানান ভুল সম্বন্ধে সচেতন করে দিই তাহলে আখেরে আমাদের সবাইকার লাভ হবে বলে আমি মনে করি!
আসরের কবিবন্ধুদের ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানিয়ে আমার এই সামান্য লেখার ইতি টানলাম।