হয়তো আমি মানুষ নই, নই মানুষের বংশধর।
মানুষগুলো সকালে উঠে, চা খায়, কাগজ পড়ে,
আমি উঠি না, চা খাই না, কাগজ পড়ি না।
মানুষগুলো বাসে উঠে, অফিসে যায়, কাজ করে,
আমি বাসে উঠি না, অফিসে যাই না, কাজ করি না।
মানুষগুলো সন্ধ্যায় ফেরে, খায়, ঘুমায়, স্বপ্ন দেখে,
আমি ফিরি না, খাই না, ঘুমাই না, স্বপ্ন দেখি না।
মানুষগুলো ভালোবাসে, হাসে, কাঁদে, মরে,
আমি ভালোবাসি না, হাসি না, কাঁদি না, মরি না।
মানুষগুলো অন্যরকম, অপরিচিত, দূর, অসম্ভব।

তবু আমার ঘরে একটি জানালা আছে, যেখানে
সূর্যের আলো এসে থামে,
পাখিরা বসে গল্প বলে গোধূলির রঙে।
মানুষের পায়ের শব্দ,
আলোর চাবুক, ট্রামের ধাতব আর্তি,
সবাই মিলে আমার ছায়ার কাছে এসে দাঁড়ায়।

হয়তো আমি গাছ,
অযথা দাঁড়িয়ে থাকা কোনো শিমুল কিংবা কাঁঠাল।
শরৎকালের বৃষ্টিতে ভিজি,
পানকৌড়ির ডানায় দেখি কাদামাখা মেঘ।
মানুষেরা পথে নামে, আমিও নামি না-রাস্তায়,
পৃথিবীর ধূলিকণা আমার শিকড়ে এসে জমে।

হয়তো আমি নদী,
বালির পিঠ চিরে চলা জেদি ধারা।
মানুষেরা সাঁতার কাটে, ভাটার সময় হাঁটে,
আমি কেবল বই, উপচে যাই চাঁদহীন রাতে।

হয়তো আমি অরণ্য,
যেখানে কেওড়া গাছের ছায়া নামে নির্জনে।
মানুষেরা আসে, সরে যায়, নামে প্রজাপতি,
আমি শুধু শুনি, আমার পাতায় মেঘের সুর।

মানুষেরা হাসে, দৌড়ে যায়, হাত ধরে কাঁদে।
আমার কোনো মুখ নেই, কোনো হাত নেই,
তবু আমি আকাশ ছুঁই, মাটির ভেতরে লুকাই।
আমি মানুষ নই, তবু আমি আছি,
তোমাদের জাগরণে, নিদ্রায়, একাকিত্বে।

মানুষেরা অচেনা, অসম্ভব,
আমি তার চেয়ে ঢের সহজ,
যেন এক বিন্দু ঘাম, কোনো মুখের কোণে,
যাকে কেউ দেখেও দেখে না।