তুমি কি নিঃসঙ্গ বনলতা সেন
জীবনানন্দ হে কবি।
এই বাংলাদেশে শস্যের চেতন
তোমার অন্তরে ছবি।
ধূসর আকাশে মেঘের নির্ঝর
ঢেকেছে তোমার মন;
কাব্যের নীহারে ভাসছে নিরন্তর
রূপসি বাংলার ধন।

ধানের শিষের মর্মর-মুখর
তোমার কবিতা-বীণা,
প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে অন্তর
গেয়েছ বিরহ-বীণা।
চিল উড়ে যায় সন্ধ্যার আকাশে
তোমার দর্শন-পথে,
হাঁসের পালক ভেসে যায় বাতাসে
নক্ষত্রখচিত রাতে।

তোমার কল্পনা অরণ্যময়ী
প্রকৃতির সাথে এক,
শব্দের মায়ায় রচেছ পৃথিবী
অপরূপ অভিষেক।
কামরূপের কুহেলি-আবরণে
খুঁজেছ জীবন-সত্য,
প্রেমের বেদনা নীল-নির্জনে
হয়েছে কবিতা-তত্ত্ব।

সূর্যাস্তরাগে রক্তিম আভায়
দেখেছ মৃত্যুর ছায়া,
তবুও লিখেছ জীবনের গাথায়
অমৃতলোকের মায়া।
সুরধুনী-তীরে নীলিমার স্রোতে
ভাসিয়ে দিয়েছ প্রাণ,
শরতের শিউলি ঝরেছে আলোতে
তোমার কবিতা-গান।

এখন তুমি যে অনন্ত নীরব
কালের গভীর তলে,
তোমার কবিতা অমর বৈভব
বাংলার বুকে জ্বলে।
ঘাসের দেশের কবি হয়ে তুমি
খুঁজেছ অস্তিত্ব-সার,
এখন তোমার চিরন্তন ভূমি
মৃত্যুর অন্ধকার।