স্টেশনের গন্ধমাখা লাল বেঞ্চির ওপরে বসে
চা-ওয়ালার হাত ঘুরছে—কাঁচের গেলাসে চুমুক দেয়া মানুষ
বদলে গেছে মুদ্রা।
পাড়ার বাতি নিভে গেছে চৌরাস্তার মোড়ে,
আঁধারের ঘ্রাণ পেতেই ফেরিওয়ালা হাঁক পাড়ে—
“সস্তা কাপড়! শীতের কম্বল!”
কাপড়ের আড়ালে উলঙ্গতার গল্প জমে ওঠে ধীরে।
দেয়াল লিখন—সাদা চুনকাম করা ইটের উপরে
জড়িয়ে পড়া রাজনৈতিক পোস্টার—
হঠাৎ সেখান থেকে ঝুলে পড়ে মুখচোরা সত্য।
হাততালি-খাওয়া কিছু কান, ডানপিটে জিভ, আর
রৌদ্রে-পোড়া কয়েকটা মুখ
ঝুলে থাকে—
মহামারির বেকারত্বে।
আধমরা বাস এসে দাঁড়ায় জনসন রোডে।
দরজার নিচু ঘষা লোহা ঘরের মেঝে চিরে ফেলে,
একটা লোহালক্কড় বাস, যেন গিলে নিচ্ছে প্রতিটা দিন—
রাজপথে দাঁড়িয়ে হাততালির প্রতিধ্বনি ভেঙে আসে না কখনো।
সবাই শোনে, সবাই দেখে—
হাত-পা বাঁধা ধোঁয়াটে গণতন্ত্রের খেলাঘর।
মেসের রুমে পুরনো কেরোসিন বাতির আলোতে
ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় স্বপ্ন।
বালিশের নিচে সিলেবাস-ছেঁড়া কবিতার খাতা—
মাঝে মাঝে ছাদে ওঠা ছেলের চুলে বাতাস বয়ে যায়;
কিন্তু সে জানে, তার পিঠে পড়ে গেছে
রাজসভার সূক্ষ্ম দাগ।
শুকিয়ে যাওয়া গাছেদের ডালে যে চড়ুইটা বসে ছিল একদিন,
তার চিৎকার ছাদে উঠে এসে হারায়—
কেউ কি শোনে সেই স্বর?
পুরনো পুকুরে ঘাসের চাদর পেতে
নীরব আকাশ রাত্রি পোহায়।
হঠাৎ সেই দিন শেষ হলে,
প্রচারের মাইক ভেঙে যায় জনপদের মাঝখানে।
রাজা হাঁটছে নগ্ন—
ডেকচি থেকে ফোটায় পড়া ফুটন্ত দুধ,
মাঠের কিনারে লেপটে থাকা শিশুর চটপট গলা—
“রাজা, তোর কাপড় কোথায়?”
কর্কটক্রান্তি রেখা ধরে হেঁটেছিল যে বালক,
অমলকান্তির স্বপ্নে বিভোর,
সে কি আজ কবিতার খাঁচা ভেঙে উড়ে গেছে দূরে?
নাকি এই উলঙ্গ রাজার তামাশা দেখে,
লজ্জায় মুখ ঢেকেছে পুরনো ঢাকার কোনো গলিতে?
কোথায় সে সরল হাসি, সেই নির্ভীক প্রশ্ন—
'রাজা, তোর কাপড় কোথায়?'—আজও বাতাসে ভাসে।