কথা ছিলো স্বপ্ন-বৃক্ষে ফুটবে আশার কুঁড়ি-কলি,
চৌদ্দ যুগের প্রগতির পাখা মেলে উড়বে
স্বাধীনতার নীলাকাশে অবাধ।
কথা ছিলো সময়-নদীর স্রোতে ভেসে যাবে কুসংস্কার,
চিন্তার চিতাভস্ম থেকে জন্ম নেবে না
অন্ধকারের অশুভ অঙ্কুর।

কথা ছিলো, মানবতার মণিকোঠায় জ্বলবে আলোকবর্তিকা।
ন্যায়ের নীরব নৃত্যে মাতবে প্রতিটি প্রান্তর,
কথা ছিলো, অসহিষ্ণুতার অগ্নি নেভাবো একদিন।

অথচ দেখি আজ ইতিহাসের চাকা উল্টো ঘুরছে,
সভ্যতার সোপান ভেঙে পড়ে অনাগত অতীতে,
প্রগতির পদধ্বনি মিলিয়ে যায় দূর দিগন্তে-

কথা ছিলো, বৈচিত্র্যের বাগানে ফুটবে নানা রঙের ফুল।
একদিন সম্প্রীতির সুরভিতে ভরে উঠবে
সকল প্রান্তর,
তাদের মিলনের মধুর সুরে বাজবে জীবনের বীণা-
একদিন স্বপ্নদ্রষ্টা এসে বলবে: উত্থান ঘটেছে।

কথা ছিলো, মুক্তির মন্ত্র জপে আমরা গড়ব নতুন
আমাদের স্বদেশ, চেতনা, অস্তিত্ব, আমাদের
আত্মার অমৃত উৎস-
চিরকাল এ-মাটি খুঁজে পাবে তার প্রকৃত পরিচয়।

কথা ছিলো, কালের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হবে দেশ।
অথচ এখনো দেখি ঘৃণার হানাদার দল
অবিরাম
মানবতার শিকড়ে কুঠার হানে নিঃশব্দে।

স্বাধীনতা-বিধ্বস্ত দেহের ওপর নগ্ন নৃত্য করে
অসহিষ্ণুতার অশরীরী ভূত।

আর কী বিস্ময়! দেখি ইতিহাস
অন্যায়ের জয়গানে মুখর,
প্রলাপ, অমানবিক তান্ডবের নামে রক্তাক্ত পতাকা ওড়ে।

কথা ছিলো 'আমাদের ধর্ম হবে মানবতার উন্নয়ন',
আমাদের মন্দির-মসজিদ হবে সমতার সুনীল আকাশ।
অথচ বিভেদের বিষাক্ত বাষ্প ছড়িয়ে পড়ে
অখণ্ড আকাশের দিকে, স্বপ্নের সীমানার দিকে।
অগ্রগতির আশা ডুবে যায় অন্ধকারের অতলে,
আমাদের অস্তিত্ব, ক্ষয়িষ্ণু আমাদের স্বপ্নময় কাল।