– কহো মোরে, কত দূরে নীল আকাশ?
রজনী কি গাঢ় কালো অন্ধকার?
তারকারা কত একা নিঃসঙ্গ নিশ্বাস?
ধরণি কি মৌন এই নিরাকার?
– যত দূর আকাশ, তত নিকটে তাহার,
যত কালো রাত্রি, তত উজ্জ্বল প্রভা।
যত একা তারা, তত প্রিয় অনিবার,
যত নীরব মৃত্তিকা, তত সঙ্গ-দাতা।
– কবে হবে অরুণোদয়, কহো মোরে?
কবে ভাঙ্গিবে তিমির এই অন্ধকার?
কুসুম প্রস্ফুটিত হবে কোন্ ভোরে?
পাখিরা গাহিবে কবে সুর অপার?
– হৃদয়ে তোমার উদিবে সূর্য প্রভাত,
চিন্তায় তোমার লুকায়িত অন্ধকার।
স্বপনে তোমার ফুটিবে কুসুম সাক্ষাৎ,
কণ্ঠে তব বাজিবে পাখির গান আবার।
– কে তুমি, হে তিমির রাতের গায়ক?
কে বাজায় এই একাকী মর্মর?
কে জ্বালিল দীপশিখা ম্লান কতক?
কে ছড়ায় শীতল স্পর্শ নিরন্তর?
– আমি সেই অন্ধকার তব অন্তরের,
তোমারি নিঃসঙ্গতা, স্বপ্ন অপরূপ।
আমি সেই কণ্ঠস্বর তব প্রাণের,
তোমারি প্রতিবিম্ব, তোমারি স্বরূপ।
– তবে কেন এত কষ্ট, এত ব্যথা?
কেন এত হতাশা, দীর্ঘশ্বাস?
উত্তর দাও মোরে, কহো এ কথা,
কেন এত যন্ত্রণা, কেন এ ত্রাস?
– কষ্টে তব অন্বেষণ, ব্যথায় বোধন,
হতাশায় প্রয়াস তব অবিরাম।
নিশ্বাসে তোমার জীবন-স্পন্দন,
এই সব মিলে তব পূর্ণ পরিণাম।
– তবে কি নাহিক আশা, ভালোবাসা?
সুখ কি অলভ্য, শান্তি কি দুর্লভ?
উত্তর দাও মোরে, মিটাও পিপাসা,
কোথা পাব জীবনের পরম বৈভব?
– আশা তব পথ চলা, প্রেম তব লক্ষ্য,
সুখ তব অর্জন, শান্তি নিজ প্রাণ।
এ সকল তোমাতেই রয়েছে নিক্ষিপ্ত,
খুঁজে নাও নিজ মাঝে জীবন-সন্ধান।
– তবে মোরে দেখাও পথ, নাও হে লইয়া,
পূর্ণ করো আত্মা মম অর্জনে।
দাও মোরে সেই জ্ঞান, যাই যে জানিয়া,
কোথা আছে পরম শান্তি এ জীবনে।
– অন্তরে তোমার পথ, হৃদয়ে লক্ষ্য,
কর্মে তব অর্জন, সত্তায় আত্মা।
তুমিই তোমার গুরু, তুমিই তো শিষ্য,
নিজেরে চিনিলে পাবে পরম সত্তা।