মায়ের মুখ মনে পড়ে না, বাবার নাম জানি না,
কোন্ বাড়িতে জন্ম আমার সেটাও চিনি না।
তবু হৃদয়ে জাগে সুর, অচেনা এক গান,
যেন কোনো দূর স্মৃতির অস্পষ্ট আহ্বান।
আশ্রমের এই ছোট্ট ঘরে কাটে দিনরাত,
খেলনা নেই, বই নেই, শুধু একটি হাত।
কিন্তু মনের আকাশে মোর ওড়ে রঙিন পাখি,
কল্পনার বাগানে ফোটে ফুল, যত দেখি।
স্কুলে যাই পায়ে হেঁটে, ব্যাগটি ছেঁড়া ছেঁড়া,
খাতা-পেন্সিল জোগাড় করি, হেলা করি না পড়া।
জ্ঞানের আলো জ্বালাই বুকে, অন্ধকার ঘুচাই,
অক্ষরের মাঝে খুঁজি জীবনের অর্থ পাই।
দুপুরবেলা যখন সবাই খায় মায়ের হাতে,
আমি তখন একা বসি ঐ বকুল গাছের তলাতে।
কিন্তু মনে জাগে সুর, প্রকৃতির কোলে,
যেন মা আমায় ডাকছে গোপন ভাষার বোলে।
রাত নামলে তারাদের ডাকি মা বলে,
চাঁদমামাকে বাবা ভাবি আকাশের কোলে।
নক্ষত্রের আলোয় দেখি বিশ্বের মিলন,
সেখানে আমি খুঁজে পাই আপনজন।
স্বপ্ন দেখি একদিন হব বড়ো,
পাব আপনজন, গড়ব নিজের গৃহ।
আশার দীপ জ্বালি হৃদয়ে, আঁধার কাটাই,
সৃষ্টির মাঝে নিজেরে খুঁজে নব জন্ম পাই।
কিন্তু আজ এই ছোট্ট বুকে অনেক বেদনা,
কেন আমার কেউ নেই, কেন এই যন্ত্রণা?
তবুও আমি হাসি খেলি, পড়ি আর লিখি,
ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনি, নতুন পথ চিনি।
জীবনটাকে ভালোবেসে এগিয়ে যাই রোজ,
অনাথ হয়ে থাকব না আর, এই আমার খোঁজ।
আমার গানে বাজবে বাঁশি, জাগবে নব প্রাণ,
সকল মানুষের মাঝে পাব আপন স্থান।