পাটখড়ির খাটিয়ার নিচে শুকোতে দেয়া নদী,
যার গায়ে দাগ শুকনো কচুরিপানার—
অমলিন জলশৈবালের ছায়া কি এখনও পড়ে?
চালাঘরের দরজা খুলে কে যেন তিরিশ বছর পরে
বেরিয়ে এলো; হাতে বাঁকা বাঁশের কঞ্চি,
কঞ্চির আগায় উড়ছে ছেঁড়া এক টুকরো আকাশ।

চায়ের ভাঁড় পড়ে আছে পুকুরপাড়ের শ্যাওলা-লাগা বালিতে,
মাটির তলায় লুকানো শিকড়ের মতো গোপন কথারা
মাটির ভাঁড়ের ফাটল দিয়ে ফুটে উঠতে চায়;
কে যেন ডাকে—
পাড়ার বাঁশঝাড়ে চুপচাপ বসে থাকা শালিকটি
এখনও কি শিখেছে কথা বলার ঝুঁকি?

ঝুলঝাড়ুর মাথায় জমে থাকা ধুলোর গন্ধে
তাকিয়ার নিচে রেখে আসা স্বপ্নের চাবিগুলো
চোরের মতন চেঁপে আছে—
প্রতিবেশীর দাওয়ায় রাতের বেলা আলো জ্বালানো নিষেধ।
মোমবাতির জ্বলন্ত সলতেয়
অন্ধকারে পুড়ে যায় ভবিষ্যৎ রাত্রিগুলো।

কলার মোচার ভেতরে লুকোনো কীটের মতো
স্বপ্নরা গুনগুনিয়ে বলে—
এই ঘরে কথা বলা বন্ধ।
শব্দের বদলে শ্বাস ফেলে যায়
ঘুণে ধরা বাঁশের বেড়া;
বাঁশঝাড় থেকে বাতাসে ভেসে আসে
একটি মূক স্বরের চিৎকার।

কতবার ঝরে পড়ে নতুন পাতা
সড়কের ধুলোমাখা ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলোয়;
সেদিন দেখেছিলাম কেউ একজন হেঁটে যায়—
তার মুখের ওপরে নোংরা খবরের কাগজ,
হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিল ঘরের জানালাগুলো,
কথারা পুড়ে ছাই হয়ে উড়ে গিয়েছিল শূন্যে।

শেষ পর্যন্ত—
বাঁশঝাড়ের শালিক আর কখনো ফিরে আসেনি।
ঘরের ভেতর যারা ছিল,
তারা শিখে গিয়েছিল—
মুক্তবাক্যের দাম বাংলাদেশে প্রাণ।