কালো রাতের অন্ধকারে
নাম মুছে দিলো কারা?
জগদীশচন্দ্র, প্রফুল্লচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ -
অমর হয়েও হারিয়ে গেল
বিজ্ঞানের এই দিশারী তারা।
সাইনবোর্ডে কালির দাগ
ইতিহাসের পাতায় ক্ষত,
জীবনানন্দের ভেজা চোখে
বৃষ্টির ধারা বয়ে যায়
আর ডাঃ আলীম চৌধুরী
শহিদ হলেন দ্বিতীয়বার।
একটি-একটি করে খুঁচিয়ে
শিকড় উপড়ে ফেলা হলো,
যুক্তির আলো নিভে গেল
মঞ্চে শুধু কর্তাদের
ভীত সুরে অস্বীকার।
কেউ বলে, "আমি শুধু প্রস্তাব দিয়েছি!"
কেউ বলে, "আমি শুধু অনুমোদন করেছি!"
কেউ বলে, "দায় শুধু আমার নয়!"
ভারদ্বাজ পাখির মতো
বালিতে মুখ লুকিয়ে
ভাবে, বিপদ এড়িয়ে গেল।
খুলনার বুকে কান পেতে শুনি -
মনীষীদের অস্তিত্ব মুছে
ভবনগুলো কাঁদে নীরবে,
"একাডেমিক ভবন-১, ২, ৩"
নামহীন, পরিচয়হীন,
যেন বন্দিশালার কক্ষ নম্বর।
আঙুল তুলে যারা বলেছিল
"পলিটিক্যালি বায়াসড" নাম বদলাও,
তারাই আজ হতবাক -
"মাথাব্যথা করতেছে, তাই
মাথাটাই কেটে ফেললাম!"
লালন সাঁই-এর সুরের বদলে
নামহীন টিএসসি ভবন,
কবির ছন্দের বদলে
শুনি শুধু আমলাতন্ত্রের গর্জন,
যেখানে বিবেক বিক্রি হয়
কমিটির আড়ালে লুকিয়ে।
অন্ধকারের গহীন রাতে
শূন্য হয়ে যায় পাতা,
প্রাণের বদলে কঙ্কাল শুধু
পরিচয়ের বদলে সংখ্যা,
জাতির স্মৃতি মুছে ফেলার
প্রহসন এ আজ খুলনায়।
মনীষীদের নির্বাসিত আত্মা
আচার্য, বসু, দাশ, চৌধুরী,
ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পাসে,
শিক্ষার্থীদের কানে কানে বলে -
"তোমাদের হাতেই ন্যস্ত
ইতিহাসের পুনর্জন্ম।"
কে সাহস দিবে আবার
নাম ফিরিয়ে আনার?
কে জাগাবে বিবেকের ডাক?
মুখোশ খুলে ফেলার সাহস
জাগবে কি এবার?
জ্ঞানের আলো, সত্যের সন্ধানে।
রাখাল যেমন ভেড়া চরায়
তেমনি নামগুলো হাঁকিয়ে নিল,
কিন্তু জানে না ইতিহাস
পেছনে তাকিয়ে শতবার ফিরে আসে,
অপসারিত নামের অভিশাপে
একদিন কাঁপবে অহংকারী প্রাচীর।