একদিন মরিতে চাই
মৃত্যুর আগেই—জানিতে চাই
কে আমায় ভালোবাসে;
বাতায়নের ধূসর আলোয় দিন যখন ভাসে,
ট্রামের শব্দে কাঁপে শহর—থার্ড স্ট্রিটের মোড়ে;
জীবনের রিকশা চলে ঘুরিয়া ফিরিয়া ঘোরে
বেঞ্চিতে বসিয়া আমি দেখি এই শহর জনপদ কাল;
কাহারা যেন চলিয়া যায়—হাতে তাদের টর্চের আলো অসামাল—
অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে।
একবার মরণের দিকে চেয়ে
বুঝিতে চাহিয়াছি আমি প্রেমের গভীর;
কত রাত্রি চলিয়াছি—কত সকালের নীর
ভিজিয়েছে চোখ—তবু জানি নাই কারে;
আজ তাই মরিতে চাই—যেন কেহ ধরে
আমার নিথর দেহ কাঁদিয়া অস্থির
হৃদয়ের গভীর।
ফ্ল্যাটের জানালায় দাঁড়াইয়া দেখি
সন্ধ্যা আঁধারে ঢাকি
নামিয়া আসে ধীরে।
পাখিরা ফিরিয়াছে ঘরে—
থামিয়া গিয়াছে ট্র্যাফিকের শব্দ সব;
কেহ নাই—শুধু আছে নীরব গরব
মৃত্যুর—যে মৃত্যু আমি খুঁজিতেছি আজ;
হয়তো বা কেহ আসিবে—করিবে বিরাজ
আমার শয্যার 'পরে—চুমায় ভরিয়া।
তবুও কি জানা যাইবে—কে আমায় নিয়া
যাইবে চলিয়া অনন্তের পথে?
কাঁদিবে কি কেহ মোর মৃত্যুর শোকেতে
নীরবে একাকী?
সব কিছু দেখিবার তরে আমি থাকি
চেতনার কোণে;
শুনিব কাহার কণ্ঠ প্রেমের স্বপনে
কাঁদিয়া উঠিবে।
হয়তো বা কেহ নাই—কেহ না আসিবে
জানালার ধারে;
শুধু রাত নামিবে আঁধারে
নিঃশব্দ পৃথিবী।
কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়ায়ে তখন শুধু দেখি অনুভাবী—
যে জীবন চলিয়া যায় তার কোনো মানে নাই;
মৃত্যুর আগেই মৃত্যু চেয়েছিলাম—তাই
জানিয়াছি এ কথা।
এখন আমার চোখ দিয়া শুধু অবিরাম বৃষ্টির ব্যথা
ঝরে পড়ে ধীরে;
কেহ নাই—কেহ নাই—শুধু রাত নামে গভীরে।