নদীর কলতানে
ভাটির বাতাসে ভেসে আসে গানে গানে
সুগন্ধার কলরব,
লোহালিয়ার ঢেউয়ে ওঠে জোয়ারের রব,
কীর্তনখোলার জলে ভাসে স্মৃতির তরি;
সবুজের সমারোহে ধানের শিষে ভরি
দুলে ওঠে মাঠ, বাঁশবনে বাজে বাঁশি,
কৃষকের কর্মগীতে জাগে দিবানিশি
সোনালি স্বপ্নের দেশ।
কোথায় মিলায় গেছে ইতিহাসের শেষ
রাজার প্রাসাদ আর নবাবি আমল;
চাঁদনি রাতের বুকে ভাসে জলমহল,
দূরে শোনা যায় আজও মুকুন্দ দাসের সুর,
কালের প্রবাহে ভেসে যায় কত দূর
বরিশালের গৌরব-গাথা।
নারকেল-সুপারির সারি দিয়ে পথ চলে যেথা
সেখানে বিরাজে আজও অতীতের ছায়া,
কচুরিপানার দলে ঢাকা জলে মায়া
ছড়ায় অজানা কোনো রহস্যের বাণী।
সন্ধ্যার আঁধারে হাজার দীপশিখার ঝলমলানি
নৌকার পালে পালে;
তেতুলিয়ার তীরে বসে থাকে কালে কালে
অনন্ত প্রতীক্ষায়।
দক্ষিণের হাওয়া এসে কানে কানে গায়
পুরনো দিনের কথা,
কীর্তন-বাউলের গানে মিশে যায় ব্যথা
হারানো সময়ের;
বরিশালের স্মৃতি আজও মনে জাগে ফের।
আম-কাঁঠালের বাগানে ফলের ভারে নুয়ে পড়া ডালে
বসন্তের রঙ লাগে; শরতের আলো ঝলমলে
সাজায় প্রকৃতি;
বর্ষার ধারায় ধোয়া মাটির সুরভি
ছড়ায় মাদকতা।
কবে যেন হারিয়ে গেছে সেই পুরনো কথা
রাজার আমল আর নবাবি দরবার;
তবুও দাঁড়িয়ে আছে অটল অটুট বারবার
বরিশাল—দক্ষিণের প্রাণ।
কালের সাক্ষী হয়ে করছে অভিযান
ইতিহাসের পথে;
স্মৃতির পাতায় লেখা হাজার কাহিনি রথে
বহন করে চলে।
নদীর কলতানে আর পাখির কলরোলে
গেয়ে ওঠে বরিশাল তার চিরন্তন গান,
যুগযুগান্তের স্বপ্ন নিয়ে করে অভিযান
ভবিষ্যতের পানে।
বাংলার হৃদয়ে বসে অমর হয়ে থাকে সে যে জানে
তার অস্তিত্বের মূল;
কালজয়ী এই ভূমি—সবুজের দোলে দুল্‌
চিরকাল রবে;
বরিশাল নদীমাতা শান্তির আশ্রয় ভবে।