কথা ছিল,
দুয়ারে ঝোলানো আলপনা হবে ছিন্ন পাতা আর কাশফুলের—
মাটির উনুনে আগুন ধরিয়ে
প্রাচীন চাঁদ কেবল শোনাবে রূপকথা।
কথা ছিল, চাঁদের আলোয় টিনের চালা মাখবে
একটি অশ্রু, একটি হাসি, একটি মায়াবী জোনাকির গান।

অথচ শোনো,
আজ খড়ের গাদায় ছাই চাপা পড়ে আছে;
আলপনা মুছে গেছে ধোঁয়া আর তেলের দাগে।
চাঁদও কেমন যেন কণ্টকিত,
তার আলো বুনো ঘাসের ধার ধরে
শুধু জমা করে হাহাকার।

কথা ছিল,
আমাদের শস্যক্ষেত হবে এক সোনালি মায়ার নাম—
শালিকের ঝাঁক নেবে তার কসম,
ধুলোমাখা গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টার শব্দে
বেজে উঠবে লোককথার সুর।
অথচ আজ, চক্রাকারে ধান কাটা হয়
কিন্তু মাড়াইকলের শব্দে মিলিয়ে যায় বৃষ্টির গান।

কথা ছিল,
শহরের বাইরে রাখালিয়ারা বেঁধে দেবে এক
গল্প-বোনা জীবন।
তাদের বাঁশির সুরে বয়ে যাবে সন্ধ্যার মেঘ।
অথচ কোথায় বাঁশি?
রাখালের হাত কেবল বয়ে বেড়ায়
মাটির শুকনো ধুলা আর
আকাশের ফাটা রোদ।

কথা ছিল,
তালগাছের ছায়া মেপে মেপে শিশুরা দৌড়াবে—
তাদের মায়ের আঁচলে বাঁধা থাকবে
একটি অদেখা স্বপ্নের গল্প।
অথচ এখন
তালগাছের নিচে শিশুদের মাথা ঢেকে যায়
লোহার শিকের ছায়ায়।
তাদের খেলাঘরে আগুন দেয়
অচেনা এক নগর।

কথা ছিল,
ভাঙা নৌকোর পাল হয়ে উঠবে আমাদের ভাষার প্রতীক,
আমাদের পায়ে থাকবে জলকাদার স্বচ্ছ প্রলেপ।
আমাদের দেবতা হবে
দেখতে একদম আমাদেরই মতো—
তৃষ্ণার্ত, রোদজ্বলা, ক্লান্ত।
অথচ দেবতার নামে আমাদের হাড় পর্যন্ত
তুলে নেয় আর্য বণিকেরা।

কথা ছিল,
আমাদের ধর্ম হবে মাটি আর রোদ্দুরের মিলন।
আমাদের জীবন হবে নদীর ধারে
অলস দুপুরের ছায়ার মতো সহজ।
অথচ এখন সবুজ মাঠ
নেমে আসে নগরীর তপ্ত ইট আর লোহার বুকে।
তরুদের সংসার ভেঙে যায়
মুখ থুবড়ে পড়া কাঠের ভাঁড়ারে।

তবু স্বপ্ন বুনি,
স্বপ্নের খেত চাষ করি, দিনের পর দিন,
ফসল বাঁধি স্বপ্নের আশায় আশায়।
কিন্তু হাওয়ায় উড়ে যায় ফুলের রং,
মনের মাঠে ফেলে রেখে কাঁটাশুঁড়।
দেখি দূরে স্বর্ণের পাহাড়,
আমার হাতে শুধুই মুঠোখানেক মাটি।
স্বপ্নের নদীতে ভাসে...ভাসে জাহাজ,
আমি তীরে দাঁড়িয়ে শুধুই চাই।