সকালবেলায় ডালের খোঁপায় চড়ুই গুনগুন করে,
মসজিদের আযানের ধ্বনি ঢেউ তোলে বাতাসে—
সেই বাতাসে এখনও চা-পাতার গন্ধ,
বড় রাস্তায় গাছপালা ঝাড়ু দেয়ার শব্দে
মিশে যায় শালিকের তিরতিরে ডানা।
কিন্তু তুমি শুনছ না, প্রিয়,
আমাদের উঠোনে আজ আর মঙ্গলঘট নেই।
হিন্দুরা ঘরে ঘরে আলো জ্বাললে
তার চেয়েও বেশি রক্ত জমে যায় খবরে।

আমি ভাঙা কাঁচের গ্লাস হাতে বসে দেখি—
এক দেশের জোনাকি আরেক দেশের প্রান্তে পৌঁছে
অন্ধকার আলোকিত করে,
কিন্তু ঈশ্বর ভেঙে দু’ভাগ।
এমনকি স্রোতস্বিনী নদীও মাঝখানে লালিমা বয়ে আনে,
জলে আর কেউ খোঁজে না চাঁদের প্রতিচ্ছবি।
তুমি বলতে পারো, কার ঈশ্বর বড়?
কেন এ ঘাসে মিশে থাকে ভয়?

দুপুরে টিফিন ক্যারিয়ারের খোলায়
বাড়ির দেয়ালে ছায়া ফেলে জানলার গ্রিল—
মাঝে মাঝে মনে হয় ঈশ্বর সেই গ্রিলের মতোই,
তুমি ছুঁতে পারো না, কিন্তু
সে তোমাকে আটকে রাখে।
একদিকে বিসর্জনের উলু,
অন্যদিকে মাতমের বিষণ্ণ ধ্বনি;
এই দ্বন্দ্বের মাঠে দাঁড়িয়ে
তুমি আমায় কী বলবে?
ঈশ্বরের নাম নিলে কেন খোলা আকাশ ঢেকে যায়?

বিকেলবেলা লুঙ্গি পরা ময়লাচাটা লোকেরা
রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসে,
তাদের ঠোঁটে কোলগেটের বিজ্ঞাপনের মতো রঙিন বিভ্রম,
কিন্তু হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে অন্ধকার।
তুমি কি জানো, এখানে গান গাওয়া একরকম অপরাধ?
মন্দিরের ঘণ্টা বাজালে হাত কাঁপে,
আর এদিকে মাইক ফাটানো সুরে
শুনতে হয় অনুপ্রেরণার কথা।

রাতে জানলার পাশে হাঁড়ি-কলসি রেখে
আমি এক টুকরো চাঁদের দিকে তাকাই।
তুমি বলতে পারো, কেন চাঁদের গায়ে দাগ?
কেন আমাদের ইতিহাসে এত ছিদ্র?
কেন আমাদের মন এই ইঁটকাঠের শহরের মতো
ভাঙাচোরা, অসম্পূর্ণ?
তুমি বলতে পারো, এই শহরের কুকুরেরা কি স্বপ্ন দেখে?
এই বেড়ালগুলো কি কখনো বলে,
‘‘এই বাঁচার পথে ভুল আছে?’’

তাহলে শোনো—
কুকুরেরা কি কখনো কবিতা লেখে?
বেড়ালগুলো কি প্রতিবাদ করে মিছিল করে?
জোছনা ভেজা রাতে কার্নিশে বসে থাকা কাক
গণতন্ত্রের ধ্বজা ওড়ায়, এ কেমন পরিহাস!
ধর্মের ধ্বজা হাতে হানাহানি চলে দেশে,
ঈশ্বর কি শুধু তাদের যারা মারতে পারে বেশে?
মানুষের পরিচয় আজ শুধু ধর্মের ফোঁটা,
পায়ের তলার মাটিও আজ বড় বেশি নড়বড়ে।
তবুও আকাশ ডাকে, পাখি ডাকে, ডাকে ভোরের আলো,
মিথ্যার বেসাতি ভেঙে, সত্য হোক জয়যুক্ত,
একদিন ঠিক ভেজাবে মাটি শ্রাবণের বৃষ্টি অবিরত।