কবিতা লিখতে গিয়ে বার বার একই কক্ষপথের চারপাশে ঘুরছি কিনা,গোলকধাঁধায় পথ হারাচ্ছি কিনা, নাকি হয়েওঠছি উত্তরণমুখী বিচিত্রমুখর, সেই বোধ নিজের কাছে মাঝে মাঝে অস্পষ্ট মনে হলেও পাঠকের কাছে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়েওঠে I
আগেই বলেছি, কবিতার বিষয় সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রেম , বিরহ , আত্মজৈবনিক , জীবনমুখী, সমসাময়িক, বিভিন্ন রকমেরই হতে পারেI যেকোনো বিষয়, যেকোনো ফর্ম , যেকোনো কনটেন্ট ,যেকোনো পদ্ধতি কবি রিপ্রেসেন্টেশন টুল হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন Iএর পূর্ণ স্বাধীনতা ও লাইসেন্স একজন কবির আছেI তবে মোদ্দা কথা হলো নিজের উপস্থিতি বা ইনভল্ভমেন্ট স্পষ্ট না হওয়া অব্দি কবিতা প্রায়শই পিতৃহারা বাস্টার্ড বলে মনেহয় I স্রষ্টার রক্ত মাংসের উপস্থিতি যদি অপত্যে লক্ষ্যকরা না যায় তাহলে উপরোক্ত ' বাস্টার্ড ' ট্যাগ যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত I কবিতার সাথে কবির একাকার না হতে পারার ব্যর্থতা কবি এবং কবিতাকে দুটি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করায় এবং করাতে বাধ্য I সভ্যতার অসভ্যতামি সমাজের অসামাজিকতা কতদূর ঠেকেছে সেইদিকে তর্জনী তাক করবার আগে নিজে কতটুকু বিশুদ্ধ সেই কৈফিয়তটা সর্বাগ্রে খোলাসা করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন I কেবলমাত্র ইনভল্ভমেন্টের মাধ্যমেই এর স্পষ্টীকরণ সম্ভব I স্পষ্ট হয়েযেতে পারে কবির চলন বলন উভয়ই কন্ট্রাডিক্টরি কিনা Iএই প্রসঙ্গে ফরাসি দার্শনিক René Descartes ( র্যনে দেকার্ত)এর উক্তিটি মনেকরি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ " To know what people really think, pay attention to what they do, rather than what they say." হাংরি আন্দোলনের অন্যতম স্রষ্টা কবি প্রদীপ চৌধুরীর ভাষায় " একজন খুনি পরিশুদ্ধ হবার আগে জীবনকে যতটা ভয় করে ( রাস্কলনিকভ, দিমিত্রি কারামাঝোভ), আজন্ম লোভী আচ্ছন্ন মানুষও নিজের কাছে নিজের স্বরূপ পরিষ্কার না হওয়া অব্দি কবিতাকে ততটা ভয় করে ।"(কবিতাধর্ম/ প্রদীপ চৌধুরী ) I দেখাগেছে কবিতায় বৈচিত্র্যময়তার প্রশ্নে, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে জবরদস্তি রিপ্রেসেন্ট করতে গিয়ে আমরা যারা কবিতা লিখি, কবিতা থেকে চলে যাই শতযোজন দূরে I হারিয়ে যায় আমাদের অস্তিত্ব I কবি ও কবিতার আত্মিক সম্পর্কের এমন চরম অবনতি ঘটে ইনভল্ভমেন্ট থাকেনা বলেই I সুতরাং কবিতা বৈচিত্র্যময় করে তোলার পাশাপাশি কবির ইনভল্ভমেন্ট স্পষ্ট করা অত্যাবশক I আর ঠিক তখনই কবিতা হয়েওঠে আত্মজীবনীমূলক , আর কবি যেহেতু এই সমাজ সভ্যতার প্রতিনিধি সেই অর্থে কবিতাও হয়ে ওঠে সার্বিক I একজন কবির জীবন, গতিপথ স্থির বা বৃত্তাকার কোনোটাই নয় বরং ঋতুর মতো পরিবর্তনশীল ,নদীর মতো গতিশীল, আঁকাবাঁকা, কখনো শ্লথ তো কখনো দ্রুত যার এক এবং অভিন্ন গন্তব্য অতল অসীম সেই সমুদ্র ,কখনও বা কূল প্লাবিত করে কখনও বা বুকে নিয়ে একরাশ বালি নুড়ি কাঁকর এগিয়ে যায়, এগিয়ে যেতে হয় I তাহলে লেখা কে উত্তরণমুখী ও বৈচিত্র্যমুখর করে তোলার জন্য বাইরের কোনো জগতে পৌঁছাবার কোনো প্রয়োজন আছে কি যেখানে আমাদের সম্পূর্ণ জীবনই বৈচিত্র্যময় উত্তরণমুখী, যেখানে সমগ্র সজীব, জড়, উত্থান পত্তন, এই সমাজ এই সভ্যতা এমনকি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড লীন হয় আমাদের ভিতর I