শতভিষা'র ভাদ্র ১৩৮১ 'র একচত্বারিংশ সংকলনে শ্রদ্ধেয় সুরজিৎ ঘোষের একটি আলোচনা প্রকাশিত হয়েছিল । প্রাসঙ্গিক মনে হ'ল আমার । তাই আলোচনাটির অংশবিশেষ পোস্ট করে দিলাম- কারুর অনুমতি না নিয়েই । মার্জনা করবেন , অতি অবশ্যই বলবেন, যদি অপরাধ করে থাকি ।
" কবিতা আসলে জ্ঞানের কথা নয় ,সে অনুভবের কথা ভাবে । জ্ঞান তার অর্জনের মুহূর্তের কাছে প্রতিশ্রুত , বড় বেশী বর্তমান নির্ভর । আর সমসাময়িক কালই কবির প্রধান শত্রু -- যাকে অতিক্রম করা প্রকৃত কবির প্রধান সংগ্রাম । অনুভব আত্মা এবং জীবন ও তার পরিপার্শ্বের শরীরে পুষ্ট উপলব্ধি অনুসারে হ'য়ে ওঠা বা ওঠার চেষ্টা , ফলত এক দূরন্ত প্রবহমানতা ।
আর এই যাওয়া সম্ভব শুধু তাঁরই পক্ষে যাঁর হাতে আছে নতুনের শিল্পিত আয়ুধ । বিষয় নয় ---যে কোন বিষয় নিয়েই কবিতা রচিত হ'তে পারে ; তাকে গৌরবাণ্বিত করার দায় কবির । কিন্তু তিনি যদি প্রথাসিদ্ধ বহূল ব্যবহৃত কাব্য-অভ্যাসের চর্চায় মগ্ন থাকেন , তবে তা হয়তো নিখুঁত কবিতা হয় , কিন্তু আধুনিক কবিতা হয়না । কেননা আধুনিকতার কাছে মন্থর পু্নরাবৃত্তির কোন যায়গা নেই ; জায়গা নেই জীর্ণ প্রকরণের , বিবর্ণ ব্যবহৃত রঙের । অন্যপক্ষে অস্থির প্রগ্ল্ভতাও ' আধুনিক ' নয় । কবি যদি তাৎক্ষণিকের কারুকর্মে শিশুসুলভ কৌতুকে ভুলে থাকেন , অধুনা যা প্রায়শঃ সুলভ , তবে 'আধুনিকতা' রূপান্তিরত হয় আধুনিকতার সংস্কারে। সংস্কার মাত্রই পরিত্যাজ্য --আধুনিকতা যখন সংস্কার , তখন সেই আধুনিকতাও । ফলে সে কেবল সৌন্দর্যের আনন্দমাত্রকেও লিপ্সা করে না , ভালোবাসে নিজেরেই মধ্যে একটি নতুন পরিণতির আবির্ভাবকে । আধুনিক কবি তাঁর জীবন ও পরিপার্শ্বের সামান্যতম শিহরণ টুকুকেও আত্মসাৎ করবেন , তারপর তাকে পর্যালোচনা করবেন বিশ্লেষণী চেতনার রঙে ; তবেই তিনি সেই উপলব্ধিকে বসাবেন ছন্দোবদ্ধ শব্দের শরীরে -- না হ'লে নয় । না হ'লে উপস্থিত সৌন্দর্য থেকে নিহিত সৌন্দর্যে বিচরণ কেবল অলীক কল্পনা মাত্র হ'য়ে থাকবে । অথচ এই যাওয়া-ই তো কবিত্ব--এই স্বাভাবিক অনায়াস বিহার , নতুনের পথে চেতনাসম্ভুত অনুভবের আলোয় ।
কবিতার জন্য জীবনে সব কিছু ত্যাগ করা যায় , কিন্তু কবিতাকে জীবনের উপর প্রভুত্ব করতে দেওয়া যায় না । "