সে রাতটা ছিল পূর্ণিমা,
আমার গায়ের রং সাদা-
বাপের চাওয়া ছেলে, আমি অনাকাঙ্ক্ষিত।
তবুও মায়ের আদরের। নাম রাখলো মৃণালিনী।
জন্মের সাতদিনের মাথায় ভীষন জ্বর-
সবাই বল্লে এবার বাঁচবেনা।
আমি বাঁচলাম, ভাইটা বাঁচলোনা।
ছ'বছরে মা গেল ছাড়ি, ঐ যমের দুয়ারে।
বাপ আমার এমনিতে ভালো। মাতাল বটে।
সন্ধ্যায় ঐ নেশায় ছোটে।
তখন আমি বারো। বাপ বলে-
বিয়া দেমু তোরে, শিবু খলিফার নিকটে।
শিউরে ওঠে বুক! বলি তাঁরে-
আমি পড়ুম। অনেক পড়ুম।
ঝামটা দিয়া উঠে সে। তারপর দুই বছর।
একদিন সকালে আমায় লইয়া চলে মন্দিরে-
আমি বুঝতে পারিনা। জোর কইরা বিয়া দেয়-
ঐ শিবু খলিফার লগে। আমি বউ হই অন্যের ঘরে।
আমার বরের বয়স চল্লিশ, সতীনের পচিশ।
দুই বিয়ালির ঘরে আমি শুধুই সুগন্ধি।
প্রতিদিন অত্যাচার। নেশার ঘোরে সে, কাতরানি আমার।
পরে বুঝছি, দেনার দায়ে বাপ আমার -
বেঁচলো তার কাছে। ধার কইরা গিলত মদ।
পায়ে ধইরা কইলাম তারে-
আমি পড়ুম। অনেক পড়ুম।
ঝামটা দিয়া উঠে সে।
ছিরা খায় শরীর আমার।
বর আমার এমনিতে ভালো। মাতাল বটে।
একদিন রাতে মাতাল নেশায়, বলে স্বামী-
তর বাপের টেকাডি কবে দিবি আমায়?
বলে সে, বড় মালিকের ভালো লাগছে-
চাঁপা রং তোর। রাইতটা ঐখানে কাটাইতাম।
বিশ্বাস করো তোমরা, গেছি আমি সেদিন-
শোধাতে বাপের ঋণ। কিন্তু-
ভোরে বট গাছে, আমার দেহটা ঝুলছিলো।
স্বামী বলে, আমার বউয়ের রূপ ছিল।
বাপ আমার এমনিতে ভালো। মাতাল বটে।
এখনো সন্ধ্যায় ঐ নেশায় ছোটে।
আর...... আমার মেয়ে হওয়া ভুল ছিল।
ভোরে বট গাছে, আমার দেহটা ঝুলছিলো।
- ইতি মৃণালিনী।
সন্দীপন পাল | হোলাক্ষেত | উদয়পুর
২০১৭ ১০শে নভেম্বর, শুক্রবার