*একটা বাস্তব কাহিনী।তবে নাম,স্থান,কাল,সময় কিছু পরিবর্তণ করা হয়েছে লেখার সুবিধার্তে *
***********************
নামটা আমার মায়াময়ী আমি শ্রমিক যে পরিযায়ী,
বাড়ি মোর হৃদয়পুরে ৷
স্বামী যে আমার চ’লে গেলে ছেলে আমায় এথায় ফেলে
নতুন শহর শুপুরে ৷
দিনগুলো তো যাচ্ছিল বেশ শরীরে সয়ে শত যে ক্লেশ
মোদের মানব দু’জনার ৷
ছোটো একটা জীবন খোর হঠাৎ এলো দেশের ‘পর
দেশ হ’ল যে তোলপার ৷
গাড়ি বাস সব বন্ধ ক’রে সরকার নাকি অতি ত্বরে
চিরিবে করোনার বুক ৷
বলাও সারা এমন কথা বিধিনিষেধ দিলেন হোতা
ভুলে তোমা আমার দুখ ৷
কাজের পাঠ গুটিয়ে দিলে সাহেবরা সব ছুটি নিলে
র’লাম আমরা শ্রমিক ৷
হাতে ছিল যত টাকা কড়ি সবই দেখি ফুরায় ত্বরি
গুনে খালি দিন তারিখ ৷
দিবস শেষে রজনী নামে ব্যথা যত ছিল প্রাণখামে
পড়িছে এ জীবন রথে ৷
ফোড়ার ‘পরে ফোড়ার দাগা সহেছি মোরা এমন লাগা
কঠিন এ চলার পথে ৷
সরকার যত অঙ্গিকার করেছিল যে সব দেবার
তা করেনি কিছুই ওরে ৷
বের হলেম তাই এ পথে ভার চাপিয়ে জীবন রথে
আপন নগরের তরে ৷
কয়েকটা দিন গেল কেটে পোলারে নিয়ে দো-পায়ে হেটে
দিনে রাতে আলো আঁধারে ৷
ক্ষুধার জ্বালায় পেঠ জ্বলে মেটাই তাহা পানের জলে
বলিবো এসব কাহারে ?
আরো কয়টা দিনের পরে ছেলে আমার মরিল ভোরে
আমারে কইরে অনাথ ৷
বল আর নাহি মোর মনে দেহ ভারে অজানা ওজনে
স্হিরে আমার দু’পা-হাত ৷
ধর্মের আজ উর্ধে উঠেই খোকারে তো দিলেম পুঁতেই
আমি নারী মা হতভাগী ৷
যার জন্য প্রতিশ্রুতি আমি করেছিলাম ভীষণ দামী
সে মরিল ক্ষুধার লাগি ৷
দুঃখ জ্বালায় তনু সারা মোর হৃদয় ভরিল তারা
আমায় করিল অসাড় ৷
এমন ক’রে কাটিল আরো দিন কতক নয় এগারো
বুকে নিয়ে ভার ব্যথার ৷
এমন সময় হোতা নাকি কইছে কথা সবারে ডাকি
দিবে ট্রেন মোদের তরে ৷
রাজায় রাজায় কথা ব’লে পৌঁছাবে মোদের দলে দলে
সবার নিজ ঘরে ঘরে ৷
কয়েক দিনের পর শেষে ফিরিলাম মোরা নিজ দেশে
হারিয়ে বহু তাজা প্রাণ ৷
দিনগুলো মোর স্বপ্নে আসে খোকন আমার শুয়ে পাশে
শুনে ‘ঘুমপাড়ানি গান’ ৷
আজও দেখো আমার মত পথ হেটে চলে শত শত
পরিযায়ী শ্রমিকদল ৷
সরকারের এ অবহেলা জানিনা এই করোনাবেলা
ছিনিবে কত মনুফল ?
*********
***
*