"এ যে দৃশ্য দেখি অন্য , এ যে বন্য এ অরণ্য "-সত্যজিৎ রায় নির্মিত বিখ্যাত ছবি হীরক রাজার দেশে ' র একটি গানের দৃশ্য । প্রকৃতির একটি নিজস্ব ভাষা আছে ।এক সুবিশাল বনানী , সুন্দর অথচ রোমাঞ্চকর । আছে এক গা ছমছমে অনুভূতি , এক অজানার আহ্বান । হঠাৎ ইতিউতি নাম না জানা পাখির ডাক । কান পেতে শুনলে মনে হয় , যেন কিছু বলতে চায় এই প্রকৃতি । যেন কিছু বলতে চায় বনের জীবজন্তু , গাছেরা , পাখিরা । কিন্তু আমরা বধির হয়ে গেছি । তাই বন ধ্বংস করে লোকালয় হচ্ছে । আমরা আজ নৃশংস হয়ে উঠেছি । যারা কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারনে রক্তপাত ঘটায় তারা কি কখনো কান পেতে শুনেছে নির্জন প্রকৃতির ভাষা ? বিশ্বে প্রায় প্রতি বছর ই ধংস হচ্ছে ১৩০ লাখ হেক্টর বনভুমি । কারন টি যত না প্রাকৃতিক তার থেকেও বেশী মনুষ্য সৃষ্ট ।
২০১১ সাল টি পৃথিবী ব্যাপী আন্তর্জাতিক "অরণ্য বর্ষ " হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। ভারতের মত দেশে এই বছরটি একাধিক কারনে তাৎপর্য পূর্ণ । এই মুহূর্তে ভারতের জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ অরণ্য ও তার সম্পদের ওপর নির্ভর করে জীবিকা ও জীবন নির্বাহ করে । শুধু তাই নয় , যুগ যুগ ধরে এই বনাঞ্চল আমাদের জলবায়ু কে নিয়ন্ত্রন করে চলেছে । তারই সাথে খাদ্য,খনিজ,ঔষধএবং বিভিন্ন অন্যান্য সেবা দিয়ে পরিবেশ ও মানুষ কে সমৃদ্ধ   করে রেখেছে।পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ বড়ো শহর কে বাঁচিয়ে রেখেছে কোন না কোন নদী যারা অরণ্যের কাছে ঋণী।

পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ভারতবর্ষ । যেখানে দ্রুত গামী অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধাক্কায় , আভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো নির্মাণ ও শিল্পোন্নয়নের চাহিদা ক্রমেই বৃধধি পেয়েছে। এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনসংখ্যার চাপ এবং অন্যদিকে হ্রাস পেয়েছে মানব উন্নয়নসূচক বা human development index.সরকারি পরিসংখ্যান বলছে যে ,১৯৫৯ থেকে ১৯৯১ এর মধধে মাথাপিছু জমির পরিমান নেমে এসেছে ০.৮৯ হেক্টর থেকে ০.৩৭ হেক্টর এ।২০১৫ নাগাদ তা আরও কমে ০.২০ হেক্টর এ নেমে আসবে। জনসঙ্খ্যা ব্রিধধি ও অনিয়ন্ত্রিত সম্পদের ব্যাবহার চলতে থাকলেও জমির পরিমান সীমিত তাই জীবন যাত্রার মান অবধারিত ভাবে ই নিম্নগামি হতে থাকবে।

অনেক সময় ই বন পরিচালন ব্যাবস্থায় এটি উপলব্ধি যায় নি যে বৃহত্তর বনাঞ্চল কে ছোট ছোট অংশে খণ্ডিত করার মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ স্থানগুলি তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য ও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে ।ফল এ হিমালয় ও পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বসবাসকারী  জীবজন্তু রা বিপন্ন হয়েছে।এছারা রয়েছে বন বহির্ভূত অঞ্চলের চাহিদা যেমন সড়ক, রেল , বাসস্থান ও শিল্প স্থাপন এমন কি ব্যাবসাভিত্তিক বন সৃজন এগুলির কোনটাই প্রাকৃতিক বনভুমি ধ্বংস না করে সম্ভব নয় এবং ভারতের মতন বিশাল  জনসংখ্যার দেশে এই বাস্তবিক চাহিদাগুলি অস্বীকার করা যায়  না।প্রাক্রিতিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহার ও বন এর ক্রম সঙ্কোচন ভারতের অর্থনীতি তে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে বাধ্য।ভারতবর্ষের  যদি কিছু তে অগ্রাধিকার দিতে হয় তা হবে বনাঞ্চল ও কৃষিজমির স্বাস্থ্য পুনরুধধার।না হলে অর্থনীতির বিবর্ণ,  মলিন কঙ্কাল টা প্রতীয়মান হয়ে উঠবে। উদার বাজার অর্থনীতির যুগ এ এক সামগ্রিক পরিকল্পনা নিতে হবে যেখানে সামাজিক ও  প্রাকৃতিক সম্পদের মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। দেশ এর বনাঞ্চল সুরখখিত করতে যেমন সঠিক নীতির প্রয়োজন তেমনি বৈজ্ঞানিক উপলব্ধি টাও জরুরি না হলে অরণ্য রখখা  ভাবনা তেই থাকবে  আর সবুজের সমাধি দেখব আমরা এবং পরবর্তী প্রজন্ম রা।

সবাই কে বিনীত নিবেদন অবিলম্বে জল এর অপচয় বন্ধ করুন ।মাটির নীচে কমে আসছে জল ভাণ্ডার। তীব্র জল সঙ্কট থেকে রক্ষা
পেতে ও পরিবেশ বাঁচাতে আসুন পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলি ।