একদিন রাস্তায় চলতে চলতে পথের ধারে,
এক পোড়ো বাড়ির সামনে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। মানে,বলা চলে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলাম।
আসলে এই প্রজন্মের দোষ দিয়ে কি আর হবে! কথায় কথায় ছোটো-বড়, ছবি তোলেই সবে।
আমার নিজেরও আজকাল মাঝে মাঝেই,
যখন তখন, মনে ছবি তোলার ইচ্ছে জাগেই।
কিন্তু হঠাৎ এমন বিষয়ই আমার চোখে পড়ে,
যে অনেকের কাছেই তা নিকৃষ্ট বলে মনে হয়।
কিন্তু কেউ যদি কাউকে "শুয়োরের বাচ্চা" বলে, হারামি বলে গালি দেয়,শুনে আমার মন খারাপ হয়।
এই গালাগালির দুনিয়ায় কুকুরও বাদ যায় না।
কিন্তু কেন ? কেন ? কেন ? এদিকে আবার ___
কুকুরকে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু বলা হয় !
মহাকাশযানে লাইকা কে পাঠানো হয়।
এইচ.এম.ভি রেকর্ডে কুকুরের ছবি দিয়ে,
কুকুর প্রজাতিকে সম্মান জানানো হয়।
কুকুরকে মিলিটারি ও পুলিশের চাকরি দেওয়া হয়। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ওরা প্রচুর স্যালুট পায় !
তাহলে নিশ্চয়ই কাউকে, কুকুর বা তার বাচ্চা বলে,
মানুষের গালি দেওয়া উচিৎ নয়,তাতে অপমান হয়।
মনে পড়ে, গোলাপি রঙের এক শুকর-ছানার কথা,
ওর জীবনের ঘটনা নিয়ে হয়েছে কার্টুনের সিনেমা। "পিগ" বা "দ্য পিগ" কিছু একটা হবে ছবির নাম।
অপূর্ব সুন্দর সেই সিনেমাটি দেখে বুঝেছিলাম,
এক শুকর-ছানা হলেও আছে তারও জীবনের দাম। আছে মানুষের মতোই বেঁচে থাকার জীবন সংগ্ৰাম।
মানুষ নামে শত্তুর, ওৎ পেতে থাকে সর্বদা।
খাক আর না খাক, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার
"শুওরের বাচ্চা" বলে গালি কেন দেয় ওদের ? মানুষ রেগে গিয়ে মানুষকে গালি দিলে,
শুকরদের অবশ্য বলার কিছু থাকে না।
কিন্তু শুকর প্রজাতির নাম নেওয়া কেন!
তা কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকেনা,
কার পাকা ধানে ওরা মই দিয়েছে, বোঝা যায় না।
নোংরা ঘেঁটে নিজেদের খাবার ওরা নিজেরা জোটায়, খাবার জোগাড় করা কি এমন অপরাধ !
আর চেহারা, ওরা নিজেদের বুদ্ধিতে তৈরি করেনি,
তবে, মানুষেরা ওদের দেখলেই কেন যে ঘেন্না পায়। ওদের প্রতি মানুষের আচরন কখনোই ভালো নয়। নেহাৎ চামড়াটা বেশ মোটা, তাই সহজে,
ওদের মনটাতে কোনো দুঃখ পারে না ছুঁতে।
অবশ্য মানুষকে ওদের, পাত্তা না দিলেও চলে,
তাতে এমন কোনো অসুবিধে নেই।
ভালো মানুষ দেখলেও ওদের আজকাল তাই,
মনে কেমন যেন, নানা রকম সন্দেহ দেখা দেয়।
বিশেষ করে মা শুকরের মনেই যত আশঙ্কা ও ভয়।
যদি কেউ ওর ছানাদের ধরে নিয়ে,
দূরের কোনো হাটে বিক্রি করে দেয়!
প্রতিবার এতগুলো ছানা নিয়ে ঘোরাঘুরি করে,
কি করে খাবার খুঁজে বের করতে হয় তা শেখায়। এমনকি ট্র্যাফিক রুল্স পর্যন্ত যতটা সম্ভব বোঝায় । তবুও ঐ সব ছানা-পোনারা একে একে অথবা একদিনেই, কি করে যেন, নেই হয়ে যায়।
মা-শুকর ঠিক বুঝে যায়, এ সব মানুষের কারসাজি। যে বাড়িতে রাতে আশ্রয় দেয়, হয়তো তারাই !
তাই, যখন কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়াই__
একটা শুকর পরিবারের সামনে দাঁড়ালাম,
মা শুকর কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। মোবাইলটা খুঁজতে ব্যাগ হাতড়াতে গিয়ে,
যেটুকু সময় বয়ে যায় তাতেই ওরা সপরিবারে,
আর না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।
ব্যাপারটা আসলে হাবভাবের, বোঝাপড়ার।
কারন, আমার সামনে তো ওরা কেউ,
কোনো কথপোকথন করেছে বলে মনে হয় না।
তবু ওরা সকলেই, চলা বাদ দিয়ে থমকে দাঁড়ায় ।
মা-শুকর একটু সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখলেও, বাবা-শুকর, মানে ঐ পরিবারের কর্তা,
তিনি আমাকে মোটেও পাত্তা না দিয়ে,
জোরকদমে নিজের কাজ শুরু করে দেন।
শক্ত পোক্ত নাক দিয়ে নিমেষেই এক বড় সড় গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে ধপাস করে শুয়ে পড়েন।
বুঝি, এই প্রচন্ড গরমে উনি বেশ হাঁফিয়ে উঠেছেন। এখন বিশ্রাম,পুরো পরিবার তাঁর মনবাঞ্ছা বুঝে যায়,
কাজেই মায়ের দেখাদেখি মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে দু একটা বিন্না ঘাসের শেকড় খেয়েই ওরা সকলেই,
যেন এবার একটু বিশ্রাম করতে চায়।
শুকর হলেও, পরিবারের মধ্যেকার বোঝাপড়া,
স্নেহ, নিয়মানুবর্তিতা, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা,
আমার মনে, খানিকটা শ্রদ্ধা জাগায়।