সনেট ১৯৪, করোনা – ৯
সে মুমূর্ষু কলেবরে ঘুরে চলে হাতে নিয়ে অবাক আগামী,
কালশিটে চোখে তার ম্লান মুখে নতজানু অনন্ত জোছনা।
বন্ধু, হেঁটেছি দিগন্ত, শুধু দূর, অবশেষ শুধু দুর্বাসনা!
বুকে আসে কবেকার নোনা ধরা দেয়ালের নীরবতা নামি।
কোলাহল থেকে দূরে ভুলে গেছে কোন এক নিষ্পাপ আসামী,
কখনো কোথাও ছিল প্রখর জীবন মাখা সুগন্ধী দখিনা,
অনেক ঝড়ের তোড়ে পাথরের চোখ তার অসীম ঠিকানা,
তবু প্রাণ, হায় প্রাণ! অসারের সে সারথি বহু-দূরগামী।
নিস্তব্ধ স্বপ্নের শব, ক্ষত-বিক্ষত অন্তর- শুধু নোনা রক্ত!
বৃষ্টিস্নাত রক্ত-জল তার প্রিয় শহরের রাজপথ থেকে-
নতমুখে ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়লো নালা থেকে নর্দমায়!
আমিও ছিলাম দৃপ্ত, নিঃশেষিত প্রাণ এক জীবনে আসক্ত।
মিটিয়ে খরার দায় দিনে দিনে লুট হয়ে বলছে সে ডেকে,
“চলে এসো পাড় ভেঙে, একসাথে বয়ে যায় দূর-মোহনায়” ।
সনেট ১৯৫, করোনা – ১০
“চলে এসো পাড় ভেঙে, একসাথে বয়ে যায় দূর-মোহনায়,
ফিরে এসো প্রেম হয়ে, হারিয়ে যাবার আগে বাকি পথ চলি।
তুমি হাসছ যুবক?” হ্যাঁ, আমি হাসছি বটে, অন্ধকার গলি-
বেয়ে যে পুরুষ এক, ভোরের কসম হাতে কড়া নেড়ে যায়,
প্রতিহত শব্দ শুধু ফিরে আসে পৃথিবীর কোনায় কোনায়।
বন্ধু, এখুনি এ ক্ষণে, মনে হয় কোথা ফের ভিজেছে কাঁঠালি,
ধুয়ে গেল গন্ধ তার, শেষ হলো আরেকটা পথের পাঁচালি।
ঐ দূরে আরেকটা আমাকেও চুপিসারে ডাকে ইশারায়।
আহা! কী লাবণ্যতায় দুলে ওঠে আগুনের কুহকিনী শিখা!
পুড়ে গেছি কতবার, পুড়ে পুড়ে দেখেছি সে বহ্নির গহ্বরে
সুতীব্র মর্তের ক্ষুধা আর- দুর্বহ রাত্রির আবাহন রাখা।
আমরা জেনেছি আজ, সুশোভিত কবরীর প্রলুব্ধ অন্তরে
মৃত্যুর অমোঘ বাণী থরে-থরে চিরকাল থেকেছে আলেখা,
প্রেম তবু ভাষা পায় - তেজোদ্দীপ্ত তরুণের রক্তের আখরে।
এটি সনেট পরম্পরা বা Sonnet Sequence ধারার কবিতা যেটি ১৫টি সনেটের গুচ্ছ (Lot)। সনেটগুলি লেখা হয়েছে সনেট করোনা (Sonnet Corona) বা ক্রাউন অব সনেট (Crown of Sonnets) রীতিতে।