সনেট - ১৯৮, করোনা – ১৩
আমি শুনি সেই শব্দ, খুঁজি এই তুচ্ছতায় সেই পরিচয়;
সেই সব বর্ণ জুড়ে পাখির ডানায় লিখি অবুঝ বানান;
কখনও অবগ্রহ হাতছানি দিয়ে দেয় অ-কার জানান
এই আড়ষ্ট কৈশিকে। কখনও সায়াহ্নের বিরান আভায়
শারদ মেঘের মতো ক্রমাগত জড়ো হয় হাড়ের মজ্জায়
আততায়ী দীর্ঘ রাত, আবার কুড়িয়ে নিই সময়ের ত্রাণ।
উর্দি খোলা সমুদ্রের আঁষটে আঁধারে সেরে অতীতের স্নান-
আমিও দেখেছি সেই অবিনাশী মৃত্যু কতো সহজ বিস্ময়!
নিবিড় আদর মাখা নরম কুয়াশা রেখে একদিন সব,
একদিন সব ফেলে শিশিরের ভ্রূণ থেকে জেগে; নক্ষত্রের
সপ্ত-ছটা ধরেছি এ বুকের আত্ম-বিশ্বাসে, তবু, জেগে আছে
অনন্তের অসম্ভব কাঙ্ক্ষিত সম্ভাবনায়, হৃদয়ের কাছে।
ভেঙ্গে উৎসের আগল- ঐ স্বৈর সুখে ভেসে যাওয়া শহরের
সহস্র কাব্যের খুনি তুমি কেঁদে ওঠো শব্দে, থেকোনা নীরব।
সনেট - ১৯৯, করোনা – ১৪
সহস্র কাব্যের খুনি তুমি কেঁদে ওঠো শব্দে! থেকোনা নীরব
এই বিপ্লবী জ্যোৎস্নার নরম নির্জন রাতে। সমূহ সঞ্চয়
আজ বন্যফুলে, ঘাসে, যেইখানে করেছিলে প্রেম অপচয়
একদিন। দেখোনি কি? কবির ফসিল থেকে রিক্ত অনুভব
উঠে আসে? উঠে আসে অবরুদ্ধ অধীনের শুভ্র-ছায়া-শব?
ইতস্ততঃ বাতাসের ফাঁক গলে- সমীচীন গাঢ় স্তব্ধতায়
অভিসারী জোনাকির খয়েরি পাখার শব্দ- আঁধার ভাসায়;
ক্ষরিত রক্তের দাগে- ভেসেছে নীলাভ এই তুমুল বৈভব।
কে কোথায় ভালোবেসে হৃদয়ের টানে কাছে এসেছিল কবে?
যা আছে তা বোঝাপড়া নিঃসংশয় স্পষ্টতার সময়ের সাথে,
চুলে, মুখে, জমে থাকে কুয়াশার মতো দেহ স্বচ্ছ অবয়বে।
মানুষের আদি থেকে রক্তে কত যুবকেরা ভেজালো আস্তিন,
কিছু আলতার রঙ, বাকিটুকু পড়ে আছে পৃথিবীর পথে,
আঁধারের আভরণে রক্ত-রাঙা শিমুলের অরণ্যে বিলীন।
এটি Sonnet Sequence ধারার কবিতা যেটি ১৫টি সনেটের গুচ্ছ (Lot)। সনেটগুলি লেখা হয়েছে সনেট করোনা (Sonnet Corona) বা ক্রাউন অব সনেট (Crown of Sonnets) রীতিতে।