জ্যান্ত দেবশিশু
-------------------
ছেলেটার বয়স, বছর বারো----
ভাঙা ঝুপড়িতে তার আস্তানা।
ভালোমন্দ কস্মিনকালেও ----
তার ভাগ্যে জোটেনা।।
দুপুরে ভাতের পাতে,
         একচিমটে নুনের সাথে
একটুকরো মাছ -- সে খোঁজে।
এটা যে তার বিলাসিতা
             ---- এটুকু সে বোঝে।।
পাছে মা বাবা কষ্ট পায়,
        তাই হাসিমূখে খায়
              সবটুকু --- চেটেপুটে।
দুবেলা দুমুঠো ভাত
একমাএ তার ভাগ্যেই জোটে।।
হঠাৎ, আবদারের বশে,
        ---- প্রশ্ন করে বসে
মা, আমার জনমদিনে, কেক কাটবি না।
অসহায় মা উত্তর দেয় না।
বাবা বলে উঠে, হবেরে ব্যাটা- হবে
       ------আমি আছি না।
স্বপ্নভরা চোখে, ঘুমিয়ে পড়ে
  ------ মায়ের আদরে।
কাল কেক আনতে যাবে
   --------- সেই-- শহরে।।
ছেলের হাত ধরে,
  সটান ঢুকে পড়ে----
ঝাঁ চকচকে কেকের দোকানে।
বাঁধা দিতে উদ্যত গার্ডের সম্বিত ফেরে ---
বাবার ঝাঁঝালো , উত্তরে--
ভিখারি লয়, কেক কিনবেক! ছেলেটোর জনমদিনে।।
ভিতরে ঢুকেই বাচ্চাটার চোখে ধরা পড়ল---
      
    -------একটা স্বপ্নের দেশ।
        কি নেই সেখানে ---
হরেক রঙের কেক, মিস্টি , আর --
নাম না জানা এত্তো বড়বড় সন্দেশ।।
এত্তো এত্তো খাবার ,সাজানো--
  ----- থরে থরে।
অথচ তারা কেন আজও --------
   ----- অনাহারে?
হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়,
  বাবার চেনা গলায়--
"লে দ্যখ, কোনটা তুউর পছন্দ?"
বিস্ফারিত কচি মূখে তখন--
              --- বাঁধভাঙা আনন্দ।।
পছন্দেরর কেকটির দাম
          ----------- দুইশত টাকা।
বাবার মুষ্টিবদ্ধ হাতে উঁকি মারছে
           ---------- একশত টাকা।।
দুম করে রেগে গিয়ে,
       --ভীষণ জোরে চেঁচিয়ে---
লাগবে না আমার কেক, ও গুলান খারাপ।
ফিরে চল কেনে? তোর পায়ে পড়ি বাপ।।
যদি কিনেই দিবি, তবে কিনে দে---
  ------ দুকানের চকোলেট।
ভর্ত্তি করে ফিরি বাড়ি -------
----------আমার দু পকেট।।
কচি হাতের কড়ে গুনে,
          বাবার কানেকানে -----
-----শুধু নীরব আবদার।
একট করে লাগবেক,
         ------ বস্তির সবার।।
হিসেবের চকলেট নিয়ে,
      খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে----
    -----   বাড়ি ফেরার পথে ।
দুটো তার গুঁজে দিল -----
ক্রন্দনরত পথশিশুর হাতে।।
বাড়ি ফিরে সবগুলো তুলে দিল
  --- --- মায়ের নরম হাতে।
গলা জড়িয়ে শুধু বলল----
দেখিস সবাই পায় যাতে!
গুনেই, মায়ের করুন প্রশ্ন---
    -----দুটা কম কেনে?
বাবার সহজ উত্তর ----
তুউর  আর আমারটো, বাদ দে কেনে।।

পার্থ গোপাল চক্রবর্ত্তী