ইহাকে গদ্য ভাবিয়া ভুল করিবেন না; ইহা গদ্য রচনার প্রয়াস বিশেষ!
--------------------------------------------------------------
হুনছ চাঁন্দ? তুমি হুনছ আমার কথা--!
আজকাও চাঁন্দ উঠছে, একদম ফকফকা হ্যাজাকের লাহান, পূর্ণিমার চাঁন্দ!
তোমার মনে পড়ে, কেমন সুন্দর কইরা আমার মাথার চুলে বিনি কইরা দিতা এই চাঁন্দের রোশনিতে?
আমি তোমার কোলে মাথা রাইখা ঘুমাইয়া পড়তাম; আর তুমি কত্ত যতন কইরা আমায় ঘুম পাড়াইতা--;
তোমার মনে পড়ে গো চাঁন্দ? হ! আমি তো তোমারে আদর কইরা চাঁন্দই ডাহি!
আইচ্ছ্যা তুমি আমারে এত্ত ভালাবাস! তবুও আমার উপর এরহম চ্যাৎ চ্যাৎ কইরা চেত কিল্লাইগা? আমি না তোমার ময়না পাখি!
তোমারে যহন মাইনষ্যে মনা চোরা কয় আমার কি ভালা লাগে? তুমিই কও? তোমার তো কত্ত সুন্দর একখান নাম আছে, তোমার দাদী সখ কইরা নাতির নাম রাখছিল মনছুর! আব্দুল মনছুর!
তোমার বাপ-দাদায় তোমারে কি যে বিদ্যা দিয়া গেল--;উহ্! দিনের বেলায় ঘর থেইক্যা বাইর হউন যায় না।
আমারে দেখলে হগলে কয়, ঐ দেখ মনা চোরার বউ! ইশ্! এই লজ্জা আমি কেমনে সই তুমিই কও, চাঁন্দ!
তোমারে কইতে কইতে কইতে আমার গলার পানি শুকাইয়া চর পড়ছে, তুমি আর শুধরাইলা না--;
এত্ত ভালাবাসনের পরও তুমি পত্তেকবার আমারে কথা দিয়া ঠকাইছ; অমাবইস্যার রাইতে আমি ঘুমাইয়া গেলেই তুমি গতরে সইস্যার তেল মাইখ্যা বাইর হইয়া যাইতা আমারে না কইয়াই।
পরদিন ঘুম ভাঙনের আগেই তুমি ঘর ভর্তি করতা অন্য মাইনষ্যে জিনিস চুরি কইরা। আমি বেজার হইলে চুপিটি কইরা আমার পিছনে দাঁড়াইয়া আদর করতা। আমার মন ভালা না হইয়া কি আর পারত! তুমি সত্যই একটা মহাচোর! রাইতে করতা মাইনষ্যের বাড়িত চুরি আর দিন-দুপুরে আমার মনের মধ্যে হানা দিয়া মনডা চুরি কইরা লইয়া যাইতা যহন-তহন! তোমার নাম মনছুর না হইয়া মন চোর হইলে বেশি মানাইত!
আমাগো দুইজনের সংসারে কিসের অভাব আছিল কও তো চাঁন্দ! কত কইছি আমার বেশি সুখের দরকার নাই, তুমি পাশে থাইকলে সব দুঃখ মিডা হইয়া যাইব। তুমি হুনলা না আমার কথা--;
আমার যে ভয় করত! ভীষণ ভয়! তুমি যে আগুন নিয়া খেলতাছ আমি বুঝতে পারতাম, হারাদিন খালি আল্লারেই ডাকতাম। যে মাইনষ্যের ঘর চুরি কইরা তুমি নিজের ঘর ভরাইছ, হেয় মাইনষ্যে কি তোমারে ছাইড়া কথা কইব!
আমি তো তোমার কাছে এটুসখানি সুখ চাইছিলাম! তুমি হক কইরা কইতে পারবা, তোমার কাছে কুনদিন কুন জিনিসের লাইগা বায়না ধরছি? আমি তো তোমার বুকে মাথা গুইজা একটু শান্তিতে ঘুমাইতে চাইছিলাম--; আর সেই তুমিই কিনা আমারেও বাচ্চা পোলাগো লাহান ঘুম পাড়াইয়া চুরি করতে যাইতা, চাঁন্দ!
হেয় রাইতেও আজকের রাইতের লাহান পূর্ণিমা আছিল। তুমি তো কুনদিন পূর্ণিমা রাইতে চুরি করতে যাইতা না, তইলে হেয় রাইতে ক্যান গেছিলা? ক্যান? ক্যান? ক্যান?
জীবনে পত্তমবারের মত মদ গিল্ল্যা আমার গালে চটাস কইরা চড় মারছিলা! আমার দুষ আমি তোমারে বাঁধা দিছিলাম। অমন চড় খাইয়া আমার মত বেডি মাইনষ্যের কি আর তোমার মত তাগড়া জোয়ান বেডারে থামাইতে পারতাম! তবুও আমি অনেক চেষ্টা করছি, তুমি হুনলা না আমার কথা।
তোমারে ধরনের লাইগা যে জাল বুনছে তুমি টেরও পাও নায়, চাঁন্দ।
হেরা মানুষ না জানোয়ার; তোমার ত্যালতেইল্ল্যা শইল্ল্যে রড দিয়া যে পিডান দিচ্ছে! লাল রক্ত একদম ত্যাকত্যাকাইয়া ঝইরা ঝইরা পড়ছে। একটা মাইন্ষ্যে আরেকটা মাইনষ্যেরে অমন কইরা পিডাইতে পারে! তোমার গতরখানা ফুইল্ল্যা কইড়গাছের লাহান মোডা আর শক্ত হইয়া গেছিল। আহারে আমার চাঁন্দ!
খুব কষ্ট হইছিল না-- আমার চাঁন্দ!
তোমারে যহন টাইনা আইনা উডানের মধ্যি ফালাইল, আমার বিশ্বাস অইতেছিল না এইডা তুমি! তোমারে সত্যই আমি চিনি নাই। রক্তে মুখ-হাত ফেনা-ফেনা হইয়া আছিল।
আমি তো কান্দনের কথাও ভুইল্ল্যা গেছিলাম! হ হাছা কইছি এক ফোঁটাও চোখের জল পড়ে নাই তোমার লাশ দেইখ্যা! নিথর হইয়া বইয়া আছিলাম! মনা চোরারে বেদম মাইর দিয়া মাইরাই ফালাইছে অমানুষের বাইচ্ছ্যা গুলান।
আইচ্ছ্যা চাঁন্দ তুমি কেমন আছো ঐপাড়ে? আমি জানো, অহন অমাবইস্যার রাইতে আর ঘুমাইনা, পাহারা দেই! হ তোমার কবর আগলাইয়া বইয়া থাহি! আবার যদি অমাবইস্যার রাইত পাইয়া কবর থেইক্ক্যা উইঠ্যা আমার মন চুরি কর! আর তোমারে মন চুরি করতে দিমু না আমি। তয় পূর্ণিমার রাইতেও তোমার কবরের পাশে বইয়া থাহি, যদি উইঠ্যা আমার চুলে বিনি কইরা দাও, যদি আবার তোমার কোলে মাথা রাইখা ঘুম পাড়াইয়া দাও......; কিন্তু তুমি বড় স্বার্থপর; এতগুলান পূর্ণিমা গেল একবারো আসলানা আমার কাছে।
নিশ্চয় ঐপাড়ে আরেকটা ময়না পাখি অইছে তোমার; তাই না চাঁন্দ!
আমি অভাগী আজো তোমার লাইগা বইয়া থাহি, কহন আইসা আমার মন চুরি করতে গিয়া ধরা খাইবা তার আশায়! আইজো আমি তোমারে ভালাবাসি...... বহুত ভালাবাসি.....; তুমি আমারে ফালাইয়া চইল্ল্যা গেলেও মাইনষ্যে অহনো আমারে মনা চোরার বউ কইয়াই ডাহে। আমার ভালা লাগে হুনতে.....;
তুমি ঐপাড়ে ভালা থাইকো চাঁন্দ; ভালা থাইকো;