তোমরা শুনছো?
আমি বিদ্রোহী নই,
আমি স্রষ্টার অবসরে বানানো কাঠপুতুল,
আমি অল্পে হই তুষ্ট,
আমি চাই না আয়েশি জীবন!

তোমরা শোনো—
আমি এক ক্লান্ত পথিক,
আমি চাই না মসৃণ পিচঢালা রাজপথ,
আমি একাহারী হতেও প্রস্তুত,
আমি সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাই,
আমি তপ্ত দুপুরের চামচিকা— শুধু ছায়া খুঁজি!
আমি কোনো বিদ্রোহী নই!

হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি—
শুনছো?
আমি নিতান্তই সুবোধ,
ঝাপসা হয়ে আসা আতশকাঁচে—
পৃথিবী দেখতে কোনো অসুবিধা হয় না,
বাজারের ব্যাগের তলানী ভরে ফিরে আসি রোজ—
তবুও নেই কোনো অভিযোগ!
আমার সন্তান দুধে ভাতে থাকুক—
কখনো করিনি এমন ইচ্ছে পোষণ!

তোমরা শুনছো?
আমি কোনো বিদ্রোহী নই!
আমি কোনো স্লোগান দেই না,
মাথায় পরি না লাল-সবুজের কেতন,
আমি অধিকার চাই না,
আমি বুক ফোলাতেও চাই না—
পতাকার লাল বুকে মাখতে চাই না, চাই না—
চাই না আমার নামে হোক কোনো শহিদ সড়ক!
সংষ্কার-কুসংষ্কার কিছুই চাই না।

আমি গর্ত খুঁড়ে সেদিন কেঁচো পেয়েছি কিছু,
দুহাত বাড়িয়ে তাঁদের বুকে জড়িয়ে বললাম—
আজ থেকে আমরা ভাই-ভাই!

তোমরা শোনো, তোমরা শোনো—
আমি অতি নগন্য ছা-পোষা,
আমি কারফিউতে সন্ত্রস্ত হই,
সৈনিক দেখলে কেঁচোর গর্তে লুকাই,
আমি মিছিল দেখলে দৌড়ে পালাই,
আমি শিখাহীন মোমবাতি—
রৌদ্রের প্রখরতায় অনায়াসে গলে যাই!
আমি অন্ধকারের বন্দি
আমি বুর্জোয়া বুঝি না,
আমি ফ্যাসিস্ট বুঝি না,
আমি পুঁজিবাদ বুঝি না,
আমি স্বৈরাচার-গণতন্ত্র বুঝি না!
আমি লাল দেখলে ভয় পাই,
তাই কখনো মুরগীর দোকানে জল্লাদের কাছে যাই না,
ওসব দোকানে আমার আত্মীয়দের হত্যা করা হয়,
যারা আমার মতো বিদ্রোহী নয় মোটেও!

তোমরা বিশ্বাস করো—
আমি বিদ্রোহী নই,
রাজপথে আমি কোনোদিনই ছিলাম না,
আন্দোলন-সংগ্রাম এসবে আমি বধির, কানা, খোজা—
আমি চড়ুই পাখি,
সামান্য হাততালিতে আমার হৃদকম্পন সীমা ছাড়ায়!
আমি মহীলতা,
সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই!
আমি সারমেয়,
উচ্ছিষ্ট ভোজন আর লেহনে ব্যস্ত আমি!

শোনো তোমরা—
আমি বিদ্রোহী নই,
আমি কখনো হিমালয় হতে চাই নি,
চাই নি কখনো বিসুভিয়াস কিংবা মারিয়ানা ট্রেন্স হতে,
নিজেকে গড়িনি প্রকাণ্ডদেহী বটবৃক্ষরুপে,
নিতান্তই মৃদু হাওয়ায় হেলে পড়া গুল্ম আমি,
অধিকারবোধ কখনো জাগ্রত হয়নি মনে!
একান্ত সময়েও ভাবিনি কখনো “আমিও মানুষ”!
কখনো চোখ মেলে ঘরের চৌকাঠ পেইরিয়ে দেখিনি,
বুঝতে চাই নি রাষ্ট্রের হেল-দোল—
হিসেব-নিকেশ—
সরল অংকের রাজনীতি!


তোমরা বিশ্বাস করো—
আমি কোনো বিদ্রোহী নই,
আমার দেহে প্রবাহিত রক্তের চেয়ে—
এক লিটার পানির মূল্য বেশি অনেকের কাছে!
আমার ঘামের লবণাক্ততা—
কর্পোরেট প্যাকেটজাত লবণের চেয়ে কম!
আমার আবেগ-বিবেক সবই বশীভূত!
আমার জীবন তোমাদের কাছে একটা নর্দমায় বেড়ে ওঠা মশার মতো!
চাইলেই এক ট্রিগারের চাপে— কারোর ইশারায়— ফুঁস!

কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু—
আমার এই জীবন আমার স্ত্রীর কাছে,
   আমার সন্তানের কাছে,
   আমার বাবা-মা’র কাছে – অমূল্য।
তাই আমি প্রতিবাদী নই,
এই প্রাণের বিনিময়ে—
এই ধুঁকতে থাকা শ্বাসের বিনিময়ে—
এই অমানুষের পরিচয়ের বিনিময়ে—
এই সরীসৃপ জীবনের বিনিময়ে—
কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটে রোজ—
যেভাবে বাগানে ফোটে বেলী, চামেলী, হাসনুহানা—

তাই তোমরা বিশ্বাস করো—
আমি বিদ্রোহী নই!