৷৷ তুই আর মেঘ ৷৷
তুই আর মেঘ
দুটোকেই আমি ঠিকমত চিনতে পারিনা।
মেঘগুলো কেমন জানি, আপন মনে ঘুরে বেড়ায়
নীল আকাশের বুকে।
যখন যেদিকের পালে হাওয়া লাগে,
সেদিকেই তার মন।
সাদা মেঘ, কালো মেঘ,ধুসর মেঘ,
বাহারি সব মেঘ।
ওরা খেলা করে,হাসে,গায়
আবার কাঁদেও।
হয়তো মেঘগুলো যখন ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে,
তখন ওগুলো হয়, কালবোশেখীর কালো মেঘ,
আবার লাজে লাল হলে হয়, সিঁদুরে মেঘ।
মেঘের তীব্র গর্জন যেমন জানান দেয়,
ওদের বুকের জ্বালা।
তেমনি ঝরঝরিয়ে যে বৃষ্টি,
তা ওদের কান্না।
মেঘের ভেলায় রাজকুমার ঘুরে বেড়ায় তেপান্তরে, রাজকন্যা পথচেয়ে বসে থাকে,এই এলো বুঝি!
পাহাড়ের বুকে যখন একে একে জড়ো হয়,
তখন তারা শান্ত হয়, ঘুমিয়ে পরে,
বাড়ি ফেরার কথা তাদের মনে থাকে না।
অভিমানী মেঘ নিজের ইচ্ছা হলে ফিরে আসে
আবার আসেওনা, বরফের পাথর হয়ে
পাহাড়ের বুকে লেপ্টে থাকে।
শুধু আমি না, মেঘগুলোকে কেউই চেনেনা,
পরিচয় হতে না হতেই, পালিয়ে যায় দূর দেশে,
অজানা এক নেশার টানে।
সেখানে রাখাল ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ায়,
ওদের সাথে খেলা করে,নাচে,দুষ্টুমি করে
একটু পানি ছিটিয়ে পালিয়ে যেতে যেতে
সূর্যের সোনা রঙে গগণ জুড়ে রংধনু এঁকে দেয়।
মেঘদের রাগও আছে,
ভরা ভাদরে মুখ গোমরা করে
আকাশ কালো করে থমথমে একদশা,
দেখলে পিলে চমকে ওঠে।
শরতে ওদের ফুরফুরে মেজাজ,
কাশ বনের কাশ মেয়ের সাথে
রঙের মিল খোঁজে,
দুষ্টু দুষ্টু হাসে আর উড়ে উড়ে যায়।
কাশ বালিকা ওদের পেছনে
দৌড়ে যেতে যেতে হাঁপিয়ে যায়।
ভোরের শিশিরের কান্নায় বুক কাঁদে,
শান্ত করতে ওদের বুকে জড়িয়ে নেয়।
আর দূরে যায় না,ঘুমিয়ে পরে মাটিতে বিছানো,
সবুজ ঘাসের বিছানায়।
মেঘের মত, তোকেও আজ অবধি,
আমি চিনতে পারিনি।
একটা ঝিনুকের খোলসের মধ্যে তোর মনটা বন্দী।
বইয়ের পাতাগুলো কেমন জানি উল্টোপাল্টা, লেখাগুলো অস্পষ্ট, ঝাপসা।
পুরু লেন্সের চশমায়ও,ভাল পড়া যায়না।
ষড়ঋতু খেলা করে তোর মনে,
গ্রীষ্ম না যেতে যেতেই বর্ষা,
এই দেখি চান্দের আলো এই দেখি অন্ধকার।
শীতের কনকনে ঠান্ডায়ও তুই রাত জেগে
গল্প করিস নাজানি কোন রাজপুত্রের সাথে,
স্বপ্ন বুনিস বুকে।
তারপরও যখন তুই মুখ গোমড়া করে থাকিস,
তখন আমার কষ্ট লাগে,
বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করে,
হৃদপিন্ডটা চুপটি করে থেমে যেতে চায়।
শেষে বৈদ্যি এসে কি সব বড়ি দেয়, সুঁই, অক্সিজেন নানান কেছেম।
আমার ভাল্লাগেনা তুই মুখ গোমড়া করে থাকলে।
থাকিসনা অমন করে।
তোর হাসিতে মুক্তো ঝরে,
ওই মন ভোলানো হাসিতেই আমি কেমন পাগল হই।চোখদুটো আর কিছুই দেখতে পায়না।
তোর মধুর কন্ঠের প্রতিটি আওয়াজ,
আমার কানে বীণার সুরের মত বাজে।
তুই যখন চুপ হয়ে যাস,
তখন সব নীল নীল বেদনারা আমায় জ্বালায়।
আমার চোখে খোঁচা মেরে মেরে জল ঝড়ায়।
তুই কখন হাসবি, কখন কাঁদবি, কখন কাঁদাবি
আমি কিছুই জানি না।
আমার কাছে তুই প্রাচীন শিলালিপি,
ভাষা দূর্বোধ্য,অথচ ওই পড়া পড়তেই
আমার সবচে মন চায়।
অজানাকে জানতে বড় সাধ হয়,
আমি তোর ভাললাগা,ভালবাসা বুঝতে পারিনা,
যেমন পারিনা মেঘেরটা।
তুই আর মেঘ দুটোকেই আমি বুঝতে পারিনা,
চিনতে পারিনা।
আমার ভুল হয়, আমি আজও তোকে
ঠিকমত চিনতে পারিনা, বন্ধু।
২৮ জানুয়ারি ২০১৯