৷৷ আমায় ভালবাসে না  ৷৷

আমার মেয়ে আমায় ভালবাসে না।
আমি দুপুরে ঘুমালে জোর করে
ঘুম থেকে উঠতে টানাটানি করে,
ওর সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতে।
বার কয়েক না বলি,তাতেও শোনেনা
শেষে যখন চিৎকার করে বলি- যা,সর,
আর জোর করে চোখ বুজে থাকি।
তখন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে
কিছু না বলে চুপি চুপি আমার গালে
হাত বুলিয়ে চলে যায়।
ও যখনই খাবার খায় তখনই
জোর করে ওর খাবার আমায় গেলায়
আবার হাত ভিজিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়।
যখন ফেইসবুকে ব্যস্ত থাকি
জোর করে আমার ফোন কেড়ে নেয়
বলে তোমার সাথে কথা বলব।
রাতে ঘুমোতে গেলে সেকি চিৎকার
এসো,আমার কাছে এসো,
তোমার সাথে ঘুমাবো।
পড়তে বসলেই,মাথা ব্যথা,জ্বর।
মায়ের বকুনি,অতঃপর আমার চিৎকার।
বাবা,তুমি এসো, মা মারে,পড়ব না।

আমার স্ত্রী আমায় ভালবাসে না।
রোজ চিৎকার করে বাজারের ব্যাগ
হাতে ধরিয়ে দেয়,বলে বড় মাছ আনো,
মাংস আনো,ভালোটা আন।
একটা টাকাও জমাও না,
এতো শুনি রোজ।
রাত জাগলে বকে,বলে এইতো আবার
অসুখ বাঁধালে বলে,আমি কিছু জানি না।
খেতে বসলে বড় মাছটা  আমার পাতে।
বকলেও দু’দিন পরে আবার আমাকেই।
কেউ এলে বলে আরে জানোনা এখনতো এনি কবি
সময় নেই, কাজকম্ম সব শিকায় তুলেছে,
আমি লাজে মরি।
টাকায় যখন ঠেকি, বকে বকে যাদুর বাক্স থেকে
টাকা বের করে আমায় হেল্প করে,
কটা টাকা না জমালে যে কি হত! আমি বাপু
বাপের বাড়ি চলে যাব,
কিন্তু হাকডাক পর্যন্ত।
পরে শুনি বকবক করেই চলেছে,
যাক্ এ যাত্রা বাঁচা গেল।

আমার মনে একটা টিনটিনা দুষ্টু পাখি
বাসা বেঁধে বহাল তবিয়াতে চড়ে বেড়াচ্ছে
সে অনেকদিন।
সে বাবুই পাখির বাসা বাঁধে আমার হৃদপিন্ডে
ঘন ঘন ঠোঁকর মেরে মেরে হৃদপিন্ডে রক্ত ঝরায়।
আমি রাত জেগে তার কথা শুনতে
কান পেতে বসে থাকি।
ভীষণ দুষ্টু,ঠোঁটের  কাছে কথা,আমায় বলে না।
মুচকি হেসে পালিয়ে যায়,ঘুমিয়ে পরে।
আমার জন্য লাল নীল ঘুড়ি কেনে,
নাটাই হাতে ধরিয়ে দেয়,ঘুড়ির খেলা দেখবে বলে।
হাজারটা জ্বালাতন রোজ আমার জন্য বরাদ্দ।
কিন্তু যখন আমি কষ্ট পাই, কান্না করি,
সে দূরে দাঁড়িয়ে,চুপি চুপি আমার সাথে কাঁদে
আর বলে তুমি কেঁদোনা, এইতো আমি,
তবুও আমায় ভালবাসে না।

আমার মাও আমায় বকতো,
একদম ভালবাসতো না।
মরে গেছে,বেশ হয়েছে,
আর আমায় জ্বালাতে পারবে না।
শুধু শুধু বেশি বেশি খেতে দিত,
পেট ফেটে গেলেও তিনি দেখতেন না,
আর একটু লাগবে আমি জানি,
বলেই আবার এত্তগুলো।
ফালতু টেনশন করতো, রাতে জোর করে
বাতি নিভিয়ে দিত,ঘামাচি খুঁটে দিত,
মাথা ব্যথা হলে মুভ মলম দিয়েও তার স্বস্তি নেই
জোরে জোরে একটু টিপে দিত।
জ্বর হলে শান্তির বারোটা,
রাত জেগে বসে থাকা,জলপট্টি দেয়া,
সাবু রেঁধে খেতে দেয়া,একশ একুশ রকম নিয়ম
বিরক্তিকর জ্বালাতন।
আজ আমার মা-টা কেমন আছে?
মা তুমি কেমন আছো?
তুমি আমায় একদম ভালবাস না,
কেউই আমায় ভালবাসে না।

-স্বরচিত
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
বিকেলে।