গণৎকারের বোধোদয়
অজিত কুমার কর

কোষ্ঠীবিচার করেন রোজই পটলডাঙার সমীর রায়
সকাল থেকে লাইন দিয়ে পাঁচশো মানুষ প্রতীক্ষায়।
মেয়ের বাবার চিন্তা ভারী হবু জামাই কেমন তাঁর
মেয়ে কী তাঁর রইবে সুখে ভাবছে বসে বারংবার।

গণৎকারের পসার শুনে ভিন-গাঁ থেকে আসছে লোক
আশার বাণী শুনিয়ে দিলে ভুলছে মানুষ দুঃখ-শোক।
অশোকবাবুর ডাক পড়েছে ছেলের কোষ্ঠী বাড়িয়ে দেয়
'এই ছেলেটির কঠিন ব্যামো করতে হবে অনেক ব্যয়।

ভয় কোনও নেই যাবেই সেরে লাগতে পারে তিনটি মাস
বিধান দিলেন পাঁচটা পাথর রাখবে টেনে রোগের রাশ।
স্বর্ণলতার জানার ইচ্ছে জুটবে কবে চাকরি তাঁর
দিনে দিনে বাড়ছে বয়স কাজ না পেয়ে আজ বেকার।

ঘরের কাছেই চাকরি পাবে ভয় পেয়ো না এখন যাও
ন'দিন পরে পিওন বলে, 'তোমার চিঠি এই যে নাও।'
নিজের গাঁয়ে চাকরি পেয়ে বাঁধনহারা খুশির ঢেউ
জ্যোতিষীকে শাবাশ জানায় এত সাহস দেয়নি কেউ।

কদিন ধরে দেখছে লোকে চোখের কোনে কালির দাগ
মাঝে মাঝেই চেঁচিয়ে বলে, 'করছি মানত পাঁচটা ছাগ'
বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা হায় বিধাতা করলি কী
কপালে কী এটাই ছিল 'পোড়াব মা পাঁচশো ঘি।'

গণৎকারের কী যে হল ঝরেই যাচ্ছে অশ্রুজল
গণনা তাঁর শিকেয় ওঠে হারিয়ে গেছে মনের বল।
বদ্যি এসে বলল দেখে, 'কোনও রোগই দেখছি না
মুসৌরিতে যাননা চলে না হলে রোগ সারবে না।'

আমার এ রোগ সারবে না আর যতই আমি চেঞ্জে যাই
অকালমৃত্যু মেয়ের আমার এর প্রতিকার কিছুই নাই।
সমীর রায়ের কথা শুনে উঠলো কেঁপে সবার বুক
সাহস দিয়ে বদ্যি বলে বলেছে যে, সে উজবুক।

মেয়ের কোনও রোগব্যাধি নেই দুর্ভাবনা ত্যাগ করুন
আমিই ওকে করব বিয়ে রয়েছে ওর অশেষ গুণ।
কেন মিছে ভাবনা এমন হাল আমলে সব অচল
কোষ্ঠীবিচার, হাত গণনা ভুজুংভাজুং শুধুই ছল।

অসুস্থতার ওষুধ আছে দুশ্চিন্তার কারণ নেই
বিপদ এলে যুঝতে হবে তার সমাধান ঠিক হবেই।
সেদিন থেকে কোষ্ঠীবিচার ছেড়েই দিলেন সমীর রায়
রক্ষাকর্তা জামাইটি তাঁর পরম সুখে দিন কাটায়।

© অজিত কুমার কর