বিক্রম-প্রজ্ঞান সংলাপ
অজিত কুমার কর
প্রজ্ঞান
শুরু থেকে পরম যত্নে আগলে রেখেছিলে
আঁচড় লাগতে দাওনি গায়ে একাই সামাল দিলে।
বিক্রম
মা দিয়েছে দায়িত্বভার নিলাম মাথা পেতে
বিপদ এলে সামাল দেব চন্দ্রমাতে যেতে।
প্রজ্ঞান
সত্যি আমার ভাগ্য ভালো কে পায় এমন দাদা
তোমার নজর আমার দিকে জয় করে সব বাধা।
বিক্রম
পৃথিবীর টান ছিঁড়ে যখন চাঁদে দিলাম পাড়ি
শিহরিত তখন তনু চলছে দ্রুত নাড়ি
প্রজ্ঞান
নামার জন্য প্রস্তুতি শেষ নামছ ধীরে ধীরে
না যেন যায় ডুবে তরি ভিড়ার আগে তীরে।
বিক্রম
নামবো কোথায় জায়গা খুঁজি তাও গেলাম পেয়ে
গতিশূন্য হতেই হবে সবাই আছে চেয়ে।
প্রজ্ঞান
একটু আগেই নামলে তুমি সন্ধে ছ'টা তিনে
ভারতজুড়ে কী আনন্দ গর্বের এই দিনে।
বিক্রম
নামার পরেই উড়েছিল চাঁদের কিছু ধুলো
আমার নীরব প্রতীক্ষাতে থিতায় আপদগুলো।
প্রজ্ঞান
আনততল বেয়ে আমি নামছি চাঁদের পিঠে
তোমার দৃষ্টি আমার দিকে রোদটাও বেশ মিঠে।
বিক্রম
কত বুদ্ধি ওই মগজে আমি ভালোই জানি
কী কী পেলে জানাতে তাই চলল কানাকানি।
প্রজ্ঞান
দিলাম আমি আলফাকণা মাটির দিকে ছুঁড়ে
ক্ষণেক পরে তথ্য পেলাম যখন এল ঘুরে।
বিক্রম
তুমি কত ক্ষমতাবান দেখল বিশ্ববাসী
হাতে রাখি পরিয়ে দিতে ফুটল মুখে হাসি।
প্রজ্ঞান
কত ছবি তুললে আমার এবার আমি তুলি
তোমার সহায়তা আমি কেমন করে ভুলি।
বিক্রম
মাড়িয়ে যেয়ো ছোটো ঢিবি একটু সময় নিয়ো
কিন্ত গর্ত দেখতে পেলেই শীঘ্র খবর দিয়ো।
প্রজ্ঞান
ক্যালসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম টাইটানিয়াম আছে
সিলিকন-ক্রোমিয়াম-সালফার মিলেই গেল কাছে।
বিক্রম
আর কী কী পেয়েছ তুমি এবার আমায় বল
প্রয়োজনে আর কয়েক পা এগিয়ে তুমি চল।
প্রজ্ঞান
আয়রন, অক্সিজেন পেলাম আছে ম্যাঙ্গানিজও
হাইড্রোজেনও মিলতে পারে আর কিছু খনিজও।
বিক্রম
পাঠিয়ে দিলাম এসব তথ্য সবুজ পৃথিবীতে
বিজ্ঞানীদের হর্ষ প্রকাশ সজোর হাততালিতে।
প্রজ্ঞান
আর কী কী পাই দেখছি খুঁজে সময় আছে হাতে
জমাট জল আর হিলিয়াম থ্রি নেই কি আঙিনাতে?
বিক্রম
চোদ্দোটি দিন কেটে গেলে সূর্য যাবে পাটে
দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাবে পড়ব তো ঝঞ্ঝাটে।
প্রজ্ঞান
নেমে আসবে গভীর নিদ্রা নিকষ অন্ধকারে
যেন আমরা বন্দি দুজন চাঁদের কারাগারে।
বিক্রম
আমাদের ঘুম ভাঙে যদি হিমেল নবীন প্রাতে
তখন দুজন রোদ পোহাব মেরুর বারান্দাতে।
© অজিত কুমার কর