মেঘের আকাশ কাঁদলে তাকে বলে বৃষ্টি, বোবা পাহাড় কাঁদলে তাকে বলে ঝর্ণা। বড্ড পুরোনো কথায় আজও এ অনুভূতি প্রকৃতি ভাবেই মাখামাখি। তারপরও কি প্রকৃতির এমন অনিবার্য খেয়া্লী প্রকাশ কোন দিন পুরোনো হয়? নাকি হতে পারে। নাকি -এমন পুরোনো কথায় আর অনুভবে উন্নাসিক ভাসতে হয় নাকি ভাসা যায়। ঠিক তেমনি ভালবাসা অথবা ভালবাসাবাসি সেও তো অনেক পুরোনো শব্দ, অতি পুরোনো অনুভূতি। তারপরও ভালবাসি (I love you)- এ কথা যখন বলি অথবা এ কথা কেউ বললে যখন শুনি তখন কি ফুরায় এর আবেদন, ফুরায় এর শ্রুতি মধুরতা, ফুরায় কি এর আকর্ষণ, মাদকতা... ফুরায় না। বরং শুনতে শুনতে আরও অনেক স্বপ্ন এসে ভীড় করে ভালবাসার মনে। হোক সে স্বপ্ন মিথ্যা, হোক সে স্বপ্ন অনেক বড় কিংবা অতি ক্ষুদ্র। হোক সে স্বপ্ন অতি অবাস্তব, হোক সে স্বপ্ন শুধু একটা স্বপ্নই। তবুও ভালবাসাবাসিতে একটা স্বপ্ন লাগে। অর্থাত একটা অবলম্বন লাগে। যেমন মোমের ভেতর আলো থাকে বটে তবে সে আ্লোর প্রকাশের জন্য সাথে একটা সলতে লাগে। কয়লার ভেতরে আগুন থাকে বটে তবে সে আগুন জ্বালাতে একটা স্ফুলিঙ্গ লাগে।
তাই ভালবাসতেও একটা স্বপ্ন লাগেই লাগে। আর সে স্বপ্ন ভীড় করে থাকে চোখের পাতায়, মনের গভীরে অথবা বুকের মাঝখানে। আর কেমন যেন চঞ্চল করে রাখে অনুক্ষন সকাল সন্ধ্যা। অন্যভাবে বললে বলতে হয় এ যেন স্বপ্নের ভেতর ডুবে থাকা। অথচ ভালবাসাবাসির মানুষগুলো কেউ হয়ত জানেও না এ স্বপ্নের সম্ভাবনায় ভবিষ্যত কি পরিনতির দিকে হাঁটছে। কিন্তু পরিনতির কথা ভেবে তো আর ভালবাসাবাসি হয় না। তাইত কেউ কেউ বলে ভালবাসতে মিথ্যে করে হলেও স্বপ্ন দেখতে হয়। তা না হলে ভালবাসা মরে যায়। ভালবাসার শরীরে এবং গোঁড়ায় জল ঢালতে হয়, তা না হলে ভালবাসা মরে যায়। সে জলই হয়ত চোখের জল, ভালবাসার গায়েও আদর সোহাগ মাখাতে হয়, সে আদর সোহাগ মানেই হয়ত কাছে আসা, ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা। নাহলে ভালবাসার শরীরে জড়তা ভর করে। পথ চলা হোঁচট খায়। জোরে আঘাত পেলে ব্যাথা হয়, জখম হলে রক্ত ঝরে। এ ব্যাথা, এ রক্তক্ষরণ বুকের মধ্যে হয়। কেউ দেখে না, কাউকে দেখানও যায় না। এমনকি ভালবাসার মানুষকেও না। এ চরম কষ্টের।
তাই সে ভালবাসাও কাঁদে, কখনও কখনও কাঁদে! কেন কাঁদে, কি ভাবে কাঁদে? কার জন্য সে কাঁদে, কতক্ষন কাঁদে? কাঁদলে কি ভালবাসার চোখে জল ঝরে, নাকি সে রাতে নিভৃতে কাঁদে আর দিনে ঘুরে বেড়ায়? লোক চোক্ষুর সামনে করে অভিনয় আর রাতের বিছানায় থাকে নির্ঘুম। কান্না শিক্ত চোখে কি আর ঘুম হয়। তবে ভালবাসার ভাল লাগা এই যে, তার সে কান্না কেউ দেখে না। আসলে এ কান্না কাউকে দেখানও যায় না। এ কান্না একান্ত নিজের। আর যতটুকু দেখানো যায় ততটুকুতে বুঝানও যায় না যে এ কান্নার সাথে ভালবাসার মানুষটির কান্নাও প্রয়োজন। তা না হলে ভালবাসার গোঁড়ায় একলা জল ঢাললে তো আর ভালবাসা বাঁচবে না। হয়ত বেঁচেও যেতে পারে। কিন্তু সেখানে স্বপ্ন হবে নিজের, ভালবাসাবাসির জন্য নয়। সেখানে স্বপ্ন হবে স্বার্থের ভালবাসার মানুষকে জড়িয়ে সুন্দর স্বপ্নের জন্য নয়। যদি ভালবাসার কান্না কেউ দেখত, তাহলে কি হত? তার জন্য কারও মন পুড়ত, কেউ তাকে ভালবেসে বুকে জড়াত, কেউ তাকে শান্তনা দিতে গল্প শোনাত অনেক সুখের গল্প। কারও কি এত সময় আছে? সকলেই শুধু ভালবাসা চায়। নিজের ভালবাসার গল্প বলে, কিন্তু ভালবাসার যে কান্না সে কান্নার গল্প কেউ শুনতে চায় না। তাই ভাবি আকাশ আর বোবা পাহাড়ের কান্নার মত ভালবাসার কান্নার কি নাম দেবো?