একটা কবিতাকে লিখতে গিয়ে কোন একটা ‘থীম’ নিয়ে তাকে অনেক ভাবে সাজানো হয় তারপর লিখা শুরু হয়। অবশ্যি সেটা সম্ভব যদি শব্দের ভান্ডার/সম্ভার এবং তাকে নিয়ে খেলার কৌশল ও সামর্থ থাকে সমৃদ্ধ। অপরদিকে ছোট করে বলতে গেলেও কোন কবিতার অন্তর্নিহিত ব্যখ্যার জন্য এবং তাকে অনুধাবন করার জন্য একটা সময় দিতে হয় কবিতার পাঠককেও। কিন্তু কবিতার পাঠক হিসেবে বিশেষ করে অনিয়মিত পাঠক হিসেবে সে সময়টুকু দিতে আমাদের কষ্ট অথবা অনিচ্ছা অথবা এড়িয়ে যাওয়া যাই বলি না কেন, তা করে কেলি- তাতে কবিতাটাকে যেমন হৃদয় দিয়ে অনুভব করা হয় না তেমনি কবিতার প্রতি ভালবাসাও জন্মায় না। এতে করে বাংলা সাহিত্যের সব চাইতে মধুর, রসের, আবেগের, আনন্দের এবং নন্দনের দোলা জাগা কবিতার মত সাহিত্য ইদানিং হোঁচট খাচ্ছে। ফলে আমরা যারা কবিতাকে গভীরভাবে অন্তর দিয়ে ভালবেসে কবিতা পড়ি, আবৃত্তি করি, কবিতা লিখি, কবিতা নিয়ে নাড়াচাড়া করি অথবা কবিতার কথা বলার জন্য উন্মূখ হয়ে থাকি তারা বার বার প্রচার বিমুখতায় কষ্ট পাই, কবিতার কথা বলতে না পেরে ভেতরে ভেতরে গভীর যন্তনায় ভূগি অথবা অস্বস্থিতে পড়ি। তারপরও কবিতা নিয়েই ঘুমাই, স্বপ্ন দেখি এবং দিন পার করি প্রতিদিন।
সিঁড়ি এবং ইউনিফর্ম
একটা সিঁড়িও মহাপুরুষকে বুকে ধারন করে
মহাকালের ইতিহাস হয়ে যায়। কেননা তার
বুকে যে মহা পুরুষ মহাপ্রলয়ের শেষ দিন তক
ছবি হয়ে, বাস্তবতা হয়ে পড়ে আ ছে।সে যে
মহাকালের শুধু মহাপুরুষই নয়, সে একজন
মহাকবি, গুরু কবিদের গুরু। যার কবিতা শুনে
কবি প্রেমিক অনায়াসে যুদ্ধে যায়, ত্রিশ লক্ষ
প্রান দেয়, স্বাধীনতার তিলক এঁকে দেয়
বিজয়ের বেশে, যার কবিতা আজও ধ্বনিত
যেন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি কনার প্রকম্পিত
ইথারে, আকাশে, বাতাসে।
কখনও মনে হয় আমি যদি সেই সিঁড়ি হতে
পারতাম, তাহলে গুরু কবিদের গুরু সেই
মহাপুরুষকে বুকে ধারন করে রাখতাম
আর বুলেট ঝাঁঝরা রঞ্জিত রক্ত হয়ে বলতাম
এ রক্ত নয়, এ আমার মায়ের মানচিত্র রঞ্জিত
বাহারি ফুলের কৃতজ্ঞতার নির্জাস যা এখনও
ধাবমান পদ্মা, মেঘনা, যমুনার স্রোত হয়ে।
ঐ মোটা ফ্রেমের চশমার চোখ যেন জীবন্ত,
চির জাগ্রত হয়ে চেয়ে থাকে হাবলের চোখ হয়ে
গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে আগামী ভবিষ্যতের দিকে।
যে ভবিষ্যতের সপ্নে, কল্পনায়, চিন্তায়, মননে শেষ
শুধুই চিত্রিত হয় বাঙ্গালী জাতির চির মুক্তি।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাওয়া মুক্তির পথ যেন থেমে
না যায়, সে জন্যই গুরু কবিদের গুরু কি শেষ
নিয়েছিলেন সিঁড়ির উপর?
পরনে সফেদ পাঞ্জাবি, ছতরে লুঙ্গি তখনও ঢেকে
রেখেছিল বাঙ্গালির লজ্জা, হিংসা আর জিঘাংসার
বীভৎস রুপ আর নিষ্পাপ মায়াবী মুখমণ্ডলে যে
অভিব্যক্তি ছিল ফুটে, তাতে ছিল ঐতিহ্য, ইতিহাস,
ইতিবৃত্ত বাঙ্গালি পোষাকের, জাতীয়তার এক
অনন্য নিদর্শন ও নির্দেশ।
তুমি নীচে না নেমে উপরে উঠো, উপরে উঠতে
সিঁড়ি লাগে, দৃষ্টি লাগে আর লাগে ইউনিফর্ম।
অথচ আজ বাঙ্গালীর কোথায় সে জাতীয় ফ্যাশন,
ইউনিফর্ম রাষ্ট্রীয় পোষাকে আর প্রেরনায়।
আজকের কবিতাটার শিরোনাম তাই দুটি ভিন্ন শব্দ দিয়ে লিখা- সিঁড়ি এবং ইউনিফর্ম। সিঁড়ি – (খুব ছোট করে) এই সিঁড়িতে জাতির পিতার রক্তাক্ত দেহ পড়ে ছিল। তার ব্যাখ্যা আর দরকার নেই। কিন্তু এই সিঁড়ি তো কত ভাগ্যবান যে তবুও তাঁকে শেষ আশ্রয় দিতে পেরেছিল। সে এখন ইতিহাস। তাঁর মরদেহের কথা বললে বা তাঁকে নিয়ে কথা উঠলে এ সিঁড়িটা বার বার আসবেই। তাই মনে হয়েছে আমি যদি ঐ সিঁড়ি হতে পারতাম, এটা কবির কল্পনা চাওয়া।
অপর দিকে, উপরে উঠতে সিঁড়ি তো লাগবেই, এটা যেমন সত্যি। তেমনি উন্নয়ন বল, মুক্তি বল, সার্থকতা বল, বড় পাওয়া বল প্রতীকী হিসেবেও সিঁড়িকে ব্যাবহার করা হয়। হয়ত আবার বলবে উপরে উঠতে সিঁড়ি কেন, এখন তো লিফট্ ব্যাবহার হয়! সেটা অন্য বিষয়।
আর উনিফরম বলতে আমি এখানে জাতীয় পোশাক এর কথা বলতে চেয়েছি। এটা এমনিতেই আমার একটা অভিমানের জায়গাও বলতে পার। আমি অনেক দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সকল দেশেরই একটা নিজস্ব পোশাকের ঐতিহ্য আছে। সেই তুলনায় আমরা একেবারেই হ য ব র ল!এদিক থেকে আমি আমাদের দেশের নারীদের স্যালুট করি। তাঁরা ঠিকই শাড়িকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এখন কথা হল জাতির পিতা প্রয়ান কালে তাঁর পরনে পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে সম্মান করে হলেও তো আমরা ওটা ব্যাবহার করাই শুধু নয় ওটাকে জাতীয় পোশাকও করতে পারি। তাহলে তাঁর প্রতি সম্মান এবং দেশের ঐতিহ্য দু’ইই গর্বের সাথে রক্ষা পায়। জাতির বিবেকের কাছে আমার এই আকুতি জানানো আছে এ কবিতার মাধ্যমে। আমি ইতি পূর্বেও বলেছি, কবিরা জাতির বিবেক। সুতরাং প্রেম, প্রকৃতি, ভালবাসা নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক সময় নিজেকে ঐ জায়গাতে দেখার চেষ্টা না করলে অসম্পূর্ণ থাকে। আমি মাঝে সে চেষ্টা করি। ভালো লাগতে পারে , আবার কারও নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমি বিবেক, শিক্ষা এবং দায়িত্ববোধের কাছে কিছুটা মুক্ত হতে চাই। যাক, সকলকে স্বাধীনতা দিবসের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল...