অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা এবং এখন তা অধিকারও বটে। এ সত্য উপলব্ধি শত শত বছর পুর্ব থেকেই উচ্চারিত হয়ে আসছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে প্রাথমিক ভাগের ১৫ নং অনুচ্ছদের (ক) তে’ও অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সাথে শিক্ষা ও চিকিৎসার কথায় এ সব কিছুকে মৌলিক প্রয়োজনের ব্যাবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা আছে। যদিও অধিকার কথাটা নেই, তবুও আমরা এখন এ সকল মৌলিক বিষয়গুলিকে অধীকার বলেই দাবী করতে শিখেছি।
যাক, আমার আজকের লিখার প্রতিপাদ্য বিষয় অবশ্য এই সকল মৌলিক চাহিদা গুলির একটি- “বাসস্থান”। এ নিয়ে মানুষের কিছু মনঃকষ্ট এবং প্রাসংগিক কথার অবতারনা করতে চাই। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকা তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্থানের প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ঠিক এর অব্যবহিত পর ঢাকার লোক সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫১ সালে যেখানে লোক সংখ্যা ০২ লক্ষ ২০ হাজার এবং ১৯৭১ সালে ১২ লক্ষ ছিল, সেখানে আজ ২০১৩ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪৩ বছর পর ঢাকায় লোক সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ০১ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশী।
আমার ভাবতে কষ্ট লাগে যে, আমরা কি সুদূর প্রসারী চিন্তার দিক থেকে এতটাই মেধা শুন্য যে আগামি ৫০ কিংবা ১০০ বছর পর আমাদে এই তিন মৌলিক চাহিদা কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে সে চিন্তাটুকু করার মত কোন জ্ঞান আমাদের নেই! আসলে তাই মনে হয়েছে আমার। তা না হলে ঢাকাকে উন্নয়নের নামে ১৯৫৬ সালে টাউন ইম্প্রুভমেন্ট এয়াক্ট্ ১৯৫৩ এর আওতায় ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাষ্ট (ডি আই টি) গঠন করা হয়। যার মূল লক্ষই ছিল ঢাকাকে উন্নয়নের পাশাপাশি আবাসনকে ঢেলে সাজানো। এর জন্য সাত সদস্যভূক্ত একটি ট্রাষ্টি বোর্ডও ছিল। অথচ ১৯৫৬ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত মাত্র প্রায় ৩১/৩২ বছর না যেতেই তৈরি করতে হল আজকের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই রাজউক কি ভাবে কাজ করছে, কতটুকু কাজ করছে, রাজধানীর কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, আমাদের নাগরিক সুবিধার পাশাপাশি কতটুকু আবাসনের সংকট নিরসন হয়েছে বা হচ্ছে তা কিছুটা হলেও আমাদের সকলের জানা।
রাজউক কর্তৃপক্ষ বলছে উত্তরা সম্প্রসারিত প্রকল্প শেষ করার সময় আবার দিসেম্বর ২০১৪ অবধি বাড়নো হল। এই কথাটার মধ্যেই কেমন যেন একটা শুভংকরের ফাঁকি নিহিত। সময় বর্ধন করা করা আবার কেমন কথা? কেন বলা যায় না আগামী ডিসেম্বর-২০১৪ এর মধ্যে প্রকল্প শেষ হবে। অথবা ডিসেম্বর-২০১৫ এর মধ্যে প্রকপ্লপ সম্পূর্ণরুপে সম্পন্ন করা হবে। তা না বলে বর্ধিত করার কথা বলা হয়। যা শুনতে শুনতে আজ প্রায় ১৬/১৭ বছর কেটে গেল। অথচ নির্দিষ্ট করে কোন পরিকল্পনাই জানা গেল না।
কে কখন মৃত্যু বরণ করবে তা স্রোস্টা ছাড়া কেউ জানেন না। কিন্তু একটা সাধারন বাঁচার সাধ তো সকলের থাকে। নির্দিষ্ট করে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা জানলেও তো মনটাকে বুঝ দেয়া যায়। এখন কেবলই দিন গোনা আর দিন গোনা।
রাজধানীতে মরতেও টাকা লাগে। বাড়ি বানিয়ে বসবাস করার জন্য এই অবসর প্রাপ্তদের তো রাজউক আর প্লট দেয় না, তাই মৃত্যুর পর রাজউক যেন প্রাপ্ত প্লটে কবর খুঁড়ার সুজোগ টুকু দেয়। অন্ততঃ ব্রীজের জন্য, রাস্তা ঘাটের জন্য, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য ইউটিলিটির জন্য রাজউককে সময় বর্ধিত করার ছলনা সহ কোন বিড়ম্বনাই পোহাতে হবে না। গিন্নী বেঁচে থাকলে নাতি-পুতিদের অন্ততঃ একদিন বলতে পারবেঃ
এইখানে তোর দাদার কবর
রাজউক গৃহায়ন প্লটে,
বছর বছর আগলিয়ে রেখেছি
রক্ত ভেজা ক্লটে।
তাতেই বা কম কিসে! জয় রাজউক, জয় তাদের গৃহায়ন সংস্কৃতি।