খুব ইচ্ছে করে নদীর সাথে কথা বলি। কিন্তু সোনাসম আমার গ্রামের মাটি বুকে ধরে জড়াজড়ি করে প্রবাহ জলধারার কলতানে কোন নদী আমাকে কাছে ডাকে না। তাই এ কষ্টটা আমাকে ভেতরে ভেতরে খুব আহত করে। সরাসরি বলিঃ আমার গ্রামে কোন নদী নেই, তাই খুব খারাপ লাগে।
নদী নেই তাতে কি? আর সবই তো আছে। বাড়ির ভিটায় ঐ যে জোড়া তাল গাছ, বাঁশঝাড়, আম-জাম কাঁঠাল গাছ, কদম কামরাঙ্গার গাছ সে সব এখনও আছে। যে চাপ কলের হাতলে ঝুলে পানির জন্য একসময় চেষ্টা করতাম সেটার চিহ্ন এখনও বর্তমান। ঝুল পাড়া দরজার চৌকাঠ, পুকুরের ঘাট তাদের দেখলেও ভাল লাগে। কিন্তু এর পরও আত্মাসম একটি নদীর অভাব যায় না আমার ভাবনা থেকে।
নদীকে কেন যে এত আপন মনে হয়! একটি নদী যেন আমার প্রাননাথ, আমার প্রেয়সী, প্রেমিকা, আমার উভয় পাড়ের আরাধ্য জলভূমি। আর তার বুকের জল যেন আমার আত্মা, সেখানে নানান রঙের পাল তোলা নৌকা, পসরার ডিঙ্গি, মাঝির গুন টানা সুর, মাছের আধারে জেলেদের আহ্লাদী মুখ যেন আমার সমস্ত পৃথিবী।
ভাবি নদী না থাকলেও আমার অবর্তমানে ভিটেমাটির চারিপাশ ছায়া ঢাকা পড়ে থাকলেও সমস্ত গাছগুছালি, কলের পাড়, পুকুরের ঘাট হয়ত আমার কথা বলে। তাই ভিটাতে পা পড়লেই কেমন জীবন্ত লাগে ওদের সংগে গলাগলি করে পড়ে থাকা পরিবেশ। এর পরও একটি নদীর সাথে কথা হয় না বলে একটা দুঃখ সারা জীবন পুষেই গেলাম। কেন যে আমার গ্রামটিতে কোন নদী নেই!
১২ এপ্রিল, ২০২১।