(উৎসর্গ - পিতা হারানো এক কন্যাকে)
সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আমি পিতা-মাতার ছায়াতলেই আছি। কিন্তু এক বন্ধুর পিতৃবিয়োগে তাকে সান্ত্বনা দিতে লেখা, যিনি অনেক কাব্যপ্রেমী ছিলেন।
---------------------------------------------------------
বইয়ের পাতার প্রতিটি ভাঁজে, প্রচ্ছদে:
কিংবা কবিতার নিসঙ্গ লাইনের ফাঁকে,
তোমার অনুভূতি সদা জড়িয়ে
প্রতিটি পাতায় প্রতিটি কোণে।
তোমার স্পর্শ-ধন্য পরম কাব্যমালা,
সযতনে আজও রেখেছি সাজিয়ে
ওগুলো যে আমার নিভৃত আনন্দ! কর্ম প্রেরণা।
কতদিন আড়ালে তুমি! ডাকো না মধুর সুরে
কতদিন দেখি না তোমায়! ডাকি না বাবা বলে।
দু'চোখে আজ অব্যর্থ শৃঙ্খল
আড়াল করে তোমায়,
তৃতীয় নয়ন একমাত্র সাথী, একাকী নিমগ্নতায়।
সাত সমুদ্রের কান্না ভেজা অলস দুপুরে
কষ্টের মিছিল ভীড় করে,
বিন্দু জমে চোখের কোণে, নীরব অভিমানে।
কেন তুমি হারিয়ে গেলে এতো তাড়াতাড়ি?
আর্তনাদে অনুরণিত ছিন্ন হৃদয়তন্ত্রী,
ঝরে পড়ে অঝর বরিষায় ভালোবাসার আকুতি।
তোমার হাতটি ধরেই আমার প্রথম পথে হাঁটা
আধো আধো বুলিতে বাবা বাবা বলে ডাকা।
উঠেছি বেড়ে বটবৃক্ষসম নিবিড় মমতার ছায়ায়,
প্রতিটি অঙ্গানু, প্রতিটি কণায়;
অস্তিত্ব তোমার পদচিহ্ন হয়ে
আগলে রেখেছে আমায়।
মেঘ জমানো আকাশ কোণে
চাঁদটি যখন হাসে,
পূর্ণিমার পূর্ণ রাতে রুপালী আলো
টবে এসে পড়ে;
দুচোখ জলে ভিজে যায় বাবা, নেই তুমি পাশে।
যখন ঐ দূর নক্ষত্রের আলো অসীমে মিশে যায়,
কেবল তাকিয়ে রই নিথর আকাশে
কি করে একলা রেখে, হারালে দূর অজানায়?
শেষ যেবার তুমি-আমি-মা গিয়েছিলাম সমুদ্র জলে;
জলধির উত্তাল হিল্লোলিত ক্ষণ
গাঙচিল ডানা মেলা নীলাম্বরে,
মুগ্ধতার চৈতন্যে প্রাণ সঞ্চারণ!
আঁখিপটে আজও আঁকা ছবিখানা, জল রঙে ধরে।
নীলাভ নীর এখন অবসাদে ভরা,
তরঙ্গমালার গর্জনভেদে;
বারংবার ভেসে ওঠে বাবা তোমার মুখখানা।
অনুপস্থিতি তোমার বিবর্ণ না করে যেন
আমার অনাগত দিনগুলি,
জগজ্জননী হয়ে মা আগলে রেখেছে তাইতো
তোমার দেয়া রংতুলি।
স্মৃতি রোমন্থনে দিনগুলি কাটে
রাত্রি নীরব অপূর্ণতায়,
তোমার আদরে ঘুমাব আর একটিবার;
বাবা তুমি কোথায়?