৹ সাবধানতার মার ৹ Rhyme: Free Verse
'সাবধানতার মার নাই' কথাটি যাহারা রটাইয়াছে
অতি অবশ্যই তাহারা প্রথমে
কুকুরের কামড় খাইয়াছে বাঁদরের বাঁদরামি দেখিয়াছে
তাদের দু পায়ের ফাঁক দিয়া বিড়াল হুটহাট দৌড় দিয়াছে
তাহারা আপাত নিরীহ প্রাণী বাঁদুর, চামচিকা, ব্যাঙ
ইঁদুর, আরশোলা প্রভৃতিরও আচমকা দর্শন করিয়াছে।
ভেজাল তেল মশলা, পাও ভাজি, দহি বড়া, মোমো
রাস্তায় দাঁড়াইয়া না খাইলে স্বাদ হয়না এমন ফুচকা
আলুর দম, পুরি-সব্জী, তেলে ভাজা ও দম বিরিয়ানি
ঝকঝকে মশলা মাখা ঝাল মুড়ি প্রভৃতিও
দেদার মজা করিয়া পেট ভরিয়া খাইয়া লইয়াছে।
প্রেমিকার সব সত্যি মনে হওয়া কথার ফুলঝুরি শুনিয়াছে
গিন্নির আজীবন খাটা দেখিয়াছে এবং খোঁটা শুনিয়াছে।
গোটা একটা কাঁঠাল কিংবা তরমুজ একলা খেয়েছে।
বন্ধুদের চক্করে পড়িয়া আ পথে কু পথে গমন করিয়াছে।
অপথ্য কুপথ্য খাইয়া পেটের ব্যথায় মরণ টের পাইয়াছে
তথা এ টু জেড, সব, সব, সব রকম আনন্দের
কাড়ি কাড়ি অভিজ্ঞতা জীবনে ভরপুর লুটিয়া লইয়াছে।
সবশেষে কোন বেরসিকের সংগে গোপনে মন্ত্রণা করিয়া
কে জানে হয়ত বা কিছু উৎকোচ গ্রহণ করিয়াই হইবে
“সাবধানতার মার নাই”-
এই আপ্ত বাক্যটি পাঁচ কান করিয়াছে।
কিন্তু খুব বেশী চালাক চতুর লোকজন-
এহেন বাজে কথায় কর্ণপাত করেন নাই।
ছোট বেলার রূপ কথায়-
তখন যা বুঝতামনা, এখন যা বুঝি
রাজপুত্র কোটাল পুত্রদের রাক্ষস খোক্কসের দেশে
পাতাল পুরীর গভীর তলদেশে কিংবা হিমশৈল চূড়ায়
পাঠাইবার ফেইল-প্রুফ ফর্মূলাই ছিল-
“উত্তরে যাওয়া নিষেধ” কথাটি ফলাও করিয়া প্রচার করিয়া দেওয়া।
গাছে গাছে বসিয়া থাকা ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী-
কানে কানে বার্তা পৌঁছাইয়া দেওয়ার কাজটা-
অতি সুনিপুনভাবে সম্পন্ন করিত।
ফলে “সাবধানতার মার নাই” কথাটি বলিয়া আসলে যে
অসাবধান হওয়ার ফায়দার কথাই বলা হইয়াছে
বাচ্চা হইতে বুড়ো সবাই শুনিবা মাত্র বুঝিয়া গিয়াছে-
ফলে ফলাফলও আশাপ্রদ হইয়াছে
সর্বত্র অসাবধান হওয়ার তুমুল হুড়াহুড়ি পড়িয়াছে।
রাস্তায় গাড়িচাপা ও গাড়ি, ফুটপাতের দোকানও কাড়ি কাড়ি, বাড়িয়াছে।
মানুষ প্রাণপণে পেটে, বেশী বেশী মোমো ফুচকা এগরোল ঠেঁসিয়াছে
ঘন ঘন ডাক্তারের বাড়িতে ভিজিট ও ভীড় দুই ই বাড়িয়াছে।
মুহুর্তের অসাবধনতায় বাজারে ইলিশের নধর কান্তি রূপে মুগ্ধ হইয়া
একটি ইলিশ কিনিতে গিয়া গাঁটের শেষ কড়িটিও খসাইয়াছে।
সারাজীবন পণ দেব না পণ নেব না বলিয়াও
সুপাত্র হাতছাড়া হওয়া পণ-যোগে রুখিয়া দিয়াছে।
কু পুত্রকে সু পুত্র বলিয়া যথা রীতি আস্কারা দেওয়া হইয়াছে
এবং উচ্ছন্নে যাইবার সব রাস্তা দেখানো হইয়াছে।
মুখে অন্য কিছু বলিয়াও যথা রীতি সংসারে
কন্যাদিগকে দায় বলিয়া মান্য করা হইয়াছে
উহাদের মনে অশেষ ক্লেশ উৎপাদন করা হইয়াছে এবং
তুই আমার কত আপন বলিয়া রোদন করা হইয়াছে।
কিন্তু সাবধান থাকিয়া কোন পাপ পুণ্য রোধ করা গিয়াছে
কস্মিনকালেও কোন পত্রপত্রিকায় এমনটি চোখে পড়ে নাই।
প্রত্যেকটি নিষিদ্ধ স্থান, কাল, পাত্র, পাত্রীর
আচার, ব্যবহার, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, চিন্তা, দুশ্চিন্তা
ধার দেওয়া, ধার নেওয়া, ঝগড়াঝাঁটি করা না করা
উঠা বসা থেকে শুয়া বসা
খাওয়া না খাওয়া থেকে পড়া না পড়া
করা না করা থেকে দেখা না দেখা
বুঝা না বুঝা থেকে জানা না জানা
ধরা থেকে অধরা, দৃশ্য থেকে অদৃশ্য
সংক্ষেপে জন্ম থেকে শ্রাদ্ধ শান্তি পর্যন্ত সমস্ত কর্মেই
অসাবধান হওয়া ছড়াইয়া পড়িয়াছে এবং জনপ্রিয় হইয়াছে।
বিপরীতে সাবধানতার কপালেও অনেক মার পড়িয়াছে।
চোর হামেশা সিন্দুক ভাঙ্গিয়াছে, ডাকাত ব্যাংক লুটিয়াছে
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি হইয়াছে।
মায় মোনালিসা নিজে ল্যুভর থেকে একবার চুরি হইয়া গিয়াছে।
তাই বলি সাবধানতার বড়াই করিলেই নিছক আহাম্মুকি করা হয়।
শিক্ষিত চাকরি পায় নাই, নিরক্ষর ধনী হইয়াছে
জ্ঞানীর লাঞ্ছন জুটিয়াছে, আকাট মূর্খ ইজ্জত পাইয়াছে
রাজনীতিতে মন্দ লোকের ভীড় বাড়িয়াছে
পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানদের দাপট বাড়িয়াছে।
ধনীর ধন খোয়া গিয়াছে, সম্মানীর মানহানি হইয়াছে।
মাইকেল জ্যাকশন থেকে মাইক টাইসন সবাই বিপদে পড়িয়াছে।
করোনার মহামারী কম লোকের উন্নত দেশগুলিতে
বেশী বেশী লোক মারিয়া দেমাগের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করিয়াছে।
সাবধান থাকিবার মিশাল কায়েম করিয়া
বিল গ্যাটস আর মিলিন্দা গেটস্
ব্রেড পীট আর এঞ্জেলীনা জুলি
আমীর খান ও কিরণ রাও আলাদা হইয়াছে।
রাবণ সীতাকে হরণ করিয়াছে, মা মনসা লখিন্দরের প্রাণ কাড়িয়াছে।
বৈশাখী সুশোভন ফেমিলী সিক্যুরিটির মুখে অশোভন ঝামা ঘষিয়াছে।
টাইটানিক ডুবিয়াছে, টুইন টাওয়ার বিধস্ত হইয়াছে।
সাত অক্টোবর ইজরাইলও নাকানি চুবানি খাইয়াছে।
সিকিউরিটির সত্যানাশ করিয়া
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কান ফুঁটো হইয়াছে।
পেজার পকেটে ফাটিয়াছে, ইরান বারবার ধোঁকা খাইয়াছে
কড়া পাহারায় থাকা সেই ইরানই আবার ফাঁকি দিয়া
পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ার দম্ভ দেখাইয়াছে।
মিশাইল আইরন ডোমের মুণ্ডপাত করিয়াছে
থাডের বিক্রি বাটা আচানক অনেক বৃদ্ধি পাইয়াছে।
করোনার টীকা না লইয়াও সদর্পে জান বাঁচাইয়া উত্তর কোরিয়া
টাকা লইয়া, বুক ঠুকিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সংগে সমস্ত রাস্তা ভাঙ্গিয়া
সৈন্য সমেত রাশিয়ার সাথে রিশতা জুড়িয়া ইউক্রেনে যুদ্ধে চলিয়াছে।
আরব রাষ্ট্রসমূহ দ্বিধান্বিত হইয়া নিদ্রা হারাইয়াছে।
কে কোথায় কবে কাহাকে সাহায্য করিয়াছিল
তাহার সমস্ত ইতিহাসই মুহূর্তে তামাদি হইয়া গিয়াছে।
এই সবকিছু এই সারকথা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করিয়াছে
সাবধানতার মার চিরকালই ছিল, আছে এবং থাকিবে।
তাই প্রেম হউক কি পরকীয়া, আক্রমন কি আত্মরক্ষা
প্রথম কিংবা শেষ, বিষয় যা খুশী এক
আমি “সাবধানতার মার নাই” কথাটির ধার না ধারিয়া
নিজ-পর নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে
নিজের মুখটি বন্ধ রাখাই উপযুক্ত সামাজিক কর্তব্য মানিয়াছি।
প্রত্যেকে নিজের সামর্থ্যের উপযুক্ত পথ বাছিয়া লইবে-
এই বিশ্বাস রাখিয়াছি।
চোখ কান খোলা রাখিবার কথাও তাহারা বলিয়াছিল
তাই আমি চোখ এবং কান প্রয়োজন মত বন্ধ রাখিয়াছি।
তবু তাহাতে আমার বিশেষ কিছু অমঙ্গল হইয়া যায় নাই।
© পলাশ কুমার রায়, ২০২৪
.