শ্রদ্ধেয় কবি বিপ্লব চন্দ্র দত্ত মহোদয়ের বাংলা কবিতায় প্রকাশিত একেবারে প্রথম দিকের একটি কবিতা এই "রাজধানী ঢাকা"(প্রকাশের সময়: ১৮/০৯/২০২৩) কবিতাটি নিয়ে আজকের আলোচনায় ব্রত হয়েছি।

শ্রদ্ধেয় কবি বিপ্লব চন্দ্র দত্ত মহোদয় বিপ্লব চন্দ্র দত্ত ২ বছর ২ মাস হলো বাংলা-কবিতায় আছেন। ইদানীং আমি উনার কবিতার একজন নিয়মিত পাঠক হিসাবে লক্ষ্য করেছি যে মূলত ছড়া কবিতায় কবি বিশেষ রুচি রাখেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সংগে নানাবিধ  বিষয়ের উপর হাল্কা চালে মনোরম ছড়া-কবিতা লিখেন। তাই আমিও জানি মন খারাপ লাগার সময়ে কবি বিপ্লব চন্দ্র দত্ত মহোদয়ের কয়েকটি কবিতা মন দিয়ে পাঠ করলে আর এসপিরিন খেতে হবে না। ব্যথার উপশমে উনার কবিতা অব্যর্থ ফল দায়ী।

"রাজধানী ঢাকা" কবিতাটি এমনি একটি মজার ছড়া কবিতা যা পাঠ করলে মনে হাস্য রসের সঞ্চার হওয়া প্রায় নিশ্চিত যদি না হাসাহাসির ব্যাপারটা কেউ অপ্রয়োজনীয় আদিখ্যেতা বলে মনে করেন। আমার ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন যে আমি রাম গরুরের ছানা পোনাদের প্রায় অহরহই দর্শন পাই যাঁরা হাস্য-রসকে জীবনে অবাঞ্চিত মনে করেন। কোন হাসির কবিতাই এমন মনের চিকিৎসায় কার্যকরী হবে বলে মনে হয় না। আমাদের 'নিত্য আনি নিত্য খাই' এর ছাপোষা জীবনে একটি হাসির কবিতা অনেক বল সঞ্চার করে, পরিস্থিতির সংগে লড়ে যাওয়ার মানসিকতাকে দৃঢ় করে বলে আমার বিশ্বাস। তাই আমি পাঠকদের কাছে এই কবিতাটির মাধ্যমে "বি চ দ" কবির সমগ্র রচনা ভান্ডারের দিকেই বেগবান হওয়ার আহ্লাদ করছি।

এইবার আলোচ্য কবিতাটি প্রসঙ্গে আসা যাক। কবিতাটি এইরূপে শুরু হয়েছে-

"গোপীবাগে গোপী নেই
মালিবাগে মালি,
শান্তিনগরে সারাজীবন
অশান্তিই খালি!

রাজারবাগে রাজা কই
পরীবাগে পরী!
স্বামীবাগে ভালো স্বামী
খোঁজে আমি মরি!"

ঈষ্! আমি তো জানতাম ই না গোপী বাগ, মালি বাগ, শান্তি নগর, রাজার বাগ, পরী বাগ এবং স্বামী বাগ নামের জায়গাগুলি বর্তমান ঢাকা নগরীতেই আছে এবং  ইতিহাস বেকার  এই কথা বলে আজ পর্যন্ত কেউ নাম গুলি পাল্টে দেয় নি। জায়গাগুলির নামের সাথে তাদের বর্তমান অবস্থার কোন মিল নেই বলে আমার কাছে এই ছড়া কবিতাটি একটি মজার হাসির কবিতা ( হা হা হা) বলে মনে হয়েছে। তবে পাশাপাশি আমার জন্য আদ্যোপান্ত এটি একটি জ্ঞান বর্ধক কবিতাও বটে।  

"কচুক্ষেতে কচু চাষ
কেউ কি দেখেছে?
নীলক্ষেত, খিলক্ষেতে
কিযে স্বপ্ন এঁকেছে?

হীরামতির ঝিল আছে
আছে হাতিরঝিল,
পিলখানায় দেখি নাতো
তৈরি হতে পিল!"

আহা। কচু ক্ষেত, নীল ক্ষেত, খিল ক্ষেত, হীরামতির ঝিল, হাতির ঝিল, পিল খানা- কি সুন্দর সুন্দর নাম। আমার তো নাম গুলি শুনেই ভাল লেগে গেল- বর্তমানে সেখানে নাম মাহাত্মের সূচক কিছু থাক বা না থাক। কোথাও থাকে না। সময় গিলে খায়। সর্বমোট ৪৪ পংক্তির এই ছড়ার ১৬ পংক্তি তো আমিই খোলসা করে দিলাম, বাকিটা দয়া করে কবিতার পাতায় গিয়ে পড়বেন, প্লীজ।

ইংরাজী Rhyme Scheme ধরলে ABCB Rhyme Scheme মেনে এই কবিতাটি লেখা হয়েছে যেখানে প্রত্যেকটি স্তবকের দ্বিতীয় পংক্তির (B) 'র সংগে চতুর্থ পংক্তির (B) র অন্ত-মিল রয়েছে। আর হ্যাঁ, বলে রাখা আমার নিজের জন্য নিরাপদ যে, প্রতি স্তবকের জন্য অন্ত মিল ABC ভিন্ন। ABCB Rhyme Scheme মেনে লেখা এবং সব স্তবকে ABC একরকম, এমন পছন্দ সই কবিতা পেয়ে গেলে আলোচনার পাতায় উল্লেখ করার ইচ্ছাও মনে ধরে রাখলাম।

আমার যখন লিখতে লিখতে ধৈর্য চ্যুতি  ঘটছে, পড়তে পড়তে আপনাদের না জানি কি অবস্থা। দুঃখিত, আর সময় নেব না।

কবিতাটি কবিতার পাতায় পড়ে আপনি তাঁর রস আস্বাদন করে সামান্য দক্ষিণা স্বরূপ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্য ঐ কবিতার পাতায় রাখলে আমার এই প্রয়াস বা অপ-প্রয়াস ধন্য হবে। আমি আবারও আমার অন্য একটি ভাল লাগা কবিতা আপনাদের সামনে উপস্থিত করার সাহস পাব। কেন জানি এখনো ভাবছি, কেউ আমায় ধন্যবাদও জানাতে পারে।
সবাই খুব ভাল থাকবেন। সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।