শ্রদ্ধেয়া কবি  শ্রাবনী সিংহ এর কবিতা পাহাড়ে ফাগুন(হাইকু) বাংলা ভাষায় রচিত হাইকো শ্রেণীর কবিতার নিঃসন্দেহে একটি উৎকৃষ্ট সংগ্রহ।

জাপানী শৈলীর "হাইকো" কবিতার বিশেষত্ব অতি অল্প কথায়, ব্যাকরণ মেনে একদম নির্দিষ্ট সংখ্যক  'অক্ষর' (৫-৭-৫) বজায় রেখে মাত্র ৩টি পংক্তিতে মনের ভাব এমন ভাবে প্রকাশ করা যেন একটা বড় চিত্র পটে আঁকা কোন ছবি। আসরে যারা নিতান্তই নব্য এবং হাইকো কবিতার গঠন শৈলীর সংগে অপরিচিত, তাদের কথা ভেবেই এই কথাগুলি বলা। বিদ্ধ জন আমার এই বাতুলতা ক্ষমার চোখে দেখবেন বলেই আমার প্রত্যাশা।

কবি  শ্রাবনী সিংহ তাঁর এই সংকলনে ৬টি মনোরম হাইকো উপস্থাপন করেছেন। আমি হাইকো কবিতার রস আস্বাদনে সহযোগিতা নিমিত্ত মাত্র একটি হাইকোর গঠন শৈলী ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি-


পাহাড়ে ফাল্গুন-
মাদারফুলে চুড়ার বাঁক
আনন্দে মশগুল!

৫-৭-৫ মাত্রা বৃত্ত ছন্দে  হাইকো টির প্রথম পংক্তি " পাহাড়ে ফাল্গুন" পড়ুন পা-হা-ড়ে ফাল-গুন (১+১+১+১+১= ৫) মাত্রা; এই পংক্তি টিতে প্রকৃতিতে ফাল্গুন মাসে পাহাড়ের ফুলে ফুলে ভরা দৃশ্যের কথা বলা হয়েছে। Cause & effect দিয়ে ভাবলে প্রথম  পংক্তিতে cause দেখানো হল। এখন ভাবুন  কিভাবে (effect) বুঝা গেল ফাগুন এসেছে?

উত্তর পাওয়া যাবে পরের দুই  পংক্তিতে
দ্বিতীয় পংক্তি " মাদারফুলে চুড়ার বাঁক" পড়ুন মা-দার-ফু-লের+ চু-রার-বাঁক (১+১+১+১+১+১+১=৭) মাত্রা

তৃতীয় পংক্তি "আনন্দে মশগুল!" পড়ুন আ-নন-দে+ মশ-গুল (১+১+১+১+১=৫) মাত্রা।

এই ভাবে পরপর তিনটি পংক্তি মাৎসু বাসু প্রণীত ৫-৭-৫ নিয়ম মেনে রচনা করা হয়ছে।

এই বার ফিরে আসি কারণটি  (effect) জানার জন্য।

"মাদারফুলে চুড়ার বাঁক
আনন্দে মশগুল!"  

অর্থাৎ মাদার গাছের চূড়াগুলি ফুলে ফুলে ভরে আছে আর এমনটি হয় যখন পাহাড়ে ফাগুন আসে।

আশা করছি, প্রয়োজনে আমার এই প্রয়াস টুকু কাজে লাগিয়ে সুধী পাঠক আজকের আলোচ্য সবগুলি হাইকোর সম্যক রসাস্বদনে ব্রতী হবেন।

পাঠকের মন্তব্যটুকু সব সময়ই কবির পাওনা থাকে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে, নীচে সংযোজিত কবিতাগুলি পড়ে অবশ্যই আপনার মূল্যবান মন্তব্য যথা স্থানে রাখবেন। কবিকে উৎসাহিত করবেন। আমার এই আলোচনার জন্য আপনার কাছে একটি "ধন্যবাদ" পাওয়ার আব্দার থাকবে। এই টুকু পেলে আমিও আরো কবিতা আলোচনার পাতায় তুলে ধরতে উৎসাহিত হব। সময় নিয়ে পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।