দুঃখপ্রকাশ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকে না
ঘৃণা এমন মূল্যহীন যে, বিলিয়ে দেয়া যায় খুব সহজে প্রয়োজনের খাতিরে ক্ষোভের খাতায় লিখি খলনায়কের নাম
বাজার খরচের ফর্দের মতো দিন শেষে তা-ও ফেলে দিই নর্দমায়
আমরা মূলত সহজ জীবনের সস্তা খদ্দের
ইতিহাস রচণা করি বিজয়ীর ব্যবহৃত তরবারিকে পূজো দিয়ে
দুই মলাটের খাঁজে গুঁজে দিই সত্য-মিথ্যার বিভেদহীন কৌতুক

নির্যাতিত মানুষের আর্তনাদ দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হলে
বঞ্চিতের কাতর কান্নাধ্বনি যদি সীমানা পেরিয়ে ঢুকে যায় কর্ণকুহরে
আমরা বিব্রত হতে হতে একসময় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি
মাঝরাতে পাড়ার কুকুর নিয়মিত কেঁদে উঠলে ভাঙে না গৃহস্থের ঘুম
আমাদের চারপাশে চকচক করে ছাপোষা স্বপ্নের সৌধ সন্নিবেশ
আমরা উঁচু থেকে আরও উঁচুতে উঠতে নির্দ্বিধায় দলে যাই অতীতের ঋণ
বয়ে বেড়াবার শক্তি হারিয়ে অল্পতে ভুলে যাই শোক
অন্যায়ের ছড়াছড়িতে পা জড়িয়ে গেলে কেউকেউ কোনক্রমে পালিয়ে বাঁচি
গুজবের গনগনে আগুনের তালে তালে আমরাও নাচি লম্পট নৃত্য
বক্তৃতার মঞ্চে তর্জনগর্জন ক্ষমতার উদ্ধত তর্জনী দেখে আমারা ভীত হই আমরা নত হই আপোসে বাজাই করতালি
আমরা জানি, অসুখ করলে সারিয়ে তোলে ঐ অসুরের কারখানার দাওয়াই

আমাদের জন্য অন্য কোনো বিকল্প পথ থাকে না খোলা
আমাদেরকে যেভাবে খেলানো হয় গণ্ডির ভেতরে সেভাবেই খেলি
নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে ক্ষতবিক্ষত করি কত স্বজনের বুক
ভুল আর বিভ্রান্তির আফসোসে হাঁসফাঁস করতে করতে ক্লান্ত হই
আশপাশের মানুষগুলোর দুরবস্থা দেখে বিচলিত হবার উপলক্ষ থাকে না
আমরা ভুলে যাই -মানুষ মানুষের জন্য অবধারিত অবলম্বন
আমরা ভুলে গেছি কৃতজ্ঞতা, আমরা ভুলে গেছি মূল্যদান
আমরা ভুলে গেছি সহিষ্ণুতা, আমরা ভুলে গেছি এক বৃন্তের অস্তিত্ব
আমরা নিজে বাঁচলে বিশ্বজয়ের আনন্দে করি অভূতপূর্ব উদযাপন
আমরা কর্তব্যকে অদৃষ্টের হাতে ছেড়ে দিয়ে কোনরকম সারি দায়
আমরা প্রজন্মের কাঁধে চাপিয়ে নিজেদের দিচ্ছি অপারগতার গ্লানি
আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য রেখে যাচ্ছি এক ভবিষ্যৎহীন গাঢ় অন্ধকার।


আবৃত্তি শুনুন..